মো. আজিজ উল্লাহ: [২] আলীকদম উপজেলায় গহীন অরণ্যে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানের অংশ বিশেষ।
[৩] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক কোন সন-তারিখে এ যুদ্ধ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছিল সে বিষয়ে অনুসন্ধান বিষয়ক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ এবং অনলাইনে ব্রিটিশ ও জাপানের রেকর্ড তল্লাশীর কাজ চলমান।-এই সূত্র ধরে আলীকদম প্রেসক্লাব সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এর নের্তৃত্বে কয়েকজন উৎসাহী পর্যটক আজ বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) এই অনুসন্ধানে সফল হয়েছে।পরবর্তীতে অনুসন্ধানকারী পর্যটকরা কয়েকটি ফটোসেশন করেই স্থান ত্যাগ করেন।
[৪]মমতাজ আহম্মেদ জানান,বিমান ঝিরিতে পানিতে আংশিক ডুবানো অবস্থায় পাওয়া যায় বিমানের এই অংশটি।পরিত্যক্ত মাঝারি ধরণের এই ইঞ্জিনটির নাটবল্টু সব মরিচায় একাকার। জীর্ণশীর্ণ ইঞ্জিনের চারপাশ।কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো ইঞ্জিনের কয়েকটি নাট এর ভেতর থেকে কিছু তার (কয়েল) বের হয়ে আছে একদম মরিচা ধরা ছাড়া। সেখানে মরিচার কোন আঁচ লাগেনি! শুধুমাত্র কয়েকটি তার (কয়েল) একদম নতুনের মতো চিকচিক করছে।
[৫] স্থানীয় প্রয়াত বয়স্কদের সূত্র ধরে এলাকাবাসী জানান,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দু’টি যুদ্ধ বিমান ভেঙ্গে আছড়ে পড়েছিল বান্দরবান আলীকদম এর কালাপাহাড় ছড়ার একটি ঝিরিতে।বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্মৃতিকে মনে রাখতে সেখানকার মুরুং জনগোষ্ঠী ঝিরিটির নামকরণ করেন ‘বিমানঝিরি’।সেই থেকে অদ্যাবধি ঝিরিটি বিমানঝিরি নামেই পরিচিত।ঝিরিটি আলীকদম সদর থেকে সড়ক ও নদী পথে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে অবস্থিত।
[৬] বলা হয়ে থাকে, গত কয়েক শতাব্দীতে মানবসভ্যতার কয়েকটি বিপর্যয়ের মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) ছিল সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। এ বিপর্যয়ের ঢেউ লেগেছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বান্দরবানের আলীকদমেও।সকল যুদ্ধের মতো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও ছিলো বিবাদমান জাতি বা রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও অধিকার লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। যা এ জনপদের পাহাড়ে-পর্বতে সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন রেখে গিয়েছিল।
[৭] প্রায় ৭৮ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যখন ব্রিটিশ-জাপান মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়,তখন বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান)-মায়ানমার সীমান্ত এলাকাটি ছিল বৃহত্তর মাতামুহুরী রিজার্ভের গহীণ অরণ্য।
[৮] স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা জানান,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অধিকার করে ব্রিটিশ ভারতের দিকে যখন অগ্রসর হয়, তখন বার্মা (বর্তমান মায়ানমার) সন্নিহিত অঞ্চল হিসেবে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আংশিক আক্রান্ত হতে থাকে। এ সময় বান্দরবানের আলীকদম, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচিতে দেখা দেয় যুদ্ধকালীন অস্থিরতা। এ অঞ্চলের অর্থনীতি ও জননিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়ে।অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয় সর্বত্র।যুদ্ধে অসংখ্য প্রাণ ঝরেছিল।
[৯] এই ব্যাপারে আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিধ্বস্ত এই বিমানের অংশটি উদ্ধার করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি স্বরূপ জাতীয় জাদুঘরে অথবা দেশের বিশেষ কোন স্থানে প্রদর্শনীর জন্য রাখা যেতে পারে। সম্পাদনা : শান্ত মজুমদার