ফিরোজ আহম্মেদ: [২] নজরুল ইসলাম ঋতু তৃতীয় লিঙ্গ বা (হিজড়া সম্প্রদায়ের) সদস্য। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। তার প্রতিক আনারস।
[৩] ইতোমধ্যে এলাকায় ভোটারদের মধ্যে চমক সৃষ্টি করেছেন এই হিজড়া সম্প্রদায়ের এই সদস্য। প্রতিদিন শত শত মানুষ তার পক্ষে মিছিল মিটিংসহ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আরো নির্বাচন করছেন নৌকা প্রতিক নিয়ে নজরুল ইসলাম ছানা ও হাতপাখ প্রতিক নিয়ে মাহবুবুর রহমান। আগামি ২৮ নভেম্বর উপজেলা ১১ ইউনিয়নের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের আগে পাড়া মহল্লা, হাটে বাজারে এবং চায়ের দোকানে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছেন হিজড়া চেয়ারম্যান প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু। তবে ভোটের মুল লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম ছানা ও আনারস প্রতিকের নজরুল ইসলাম ঋতুর মধ্যে বলছেন ভোটাররা।
[৪] ঋতু উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের সন্তান। তার আরো তিন ভাই ও তিন বোন রয়েছে। তিন ভাই ঢাকাতে থাকে ও বোনেদের বিয়ে হয়ে গেছে। জন্মের পর তৃতীয় লিঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পর ৫ বছর বয়সে তাকে গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে চলে যেতে হয়। সামান্য লেখাপড়া করলেও সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতায় প্রাথমিকের গন্ডি পেরোনো হয়নি। ছোটবেলা থেকেই ঢাকার ডেমরা থানাতে তার দলের গুরুমার কাছেই বেড়ে উঠা। এখন তার বয়স ৪৩ বছর। গুরুমার পরের দ্বায়িত্বটা সে দেখভাল করেন।
[৫] ঢাকাতে থাকলেও পরিবারের টানে প্রায়ই বাড়িতে আসেন। তার কষ্টার্জিত জমানো অর্থ দিয়ে বিগত প্রায় ১৫ বছর ধরে জন্মস্থান দাদপুর গ্রামসহ ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নে আর্থিক সহযোগীতা করছেন। এ পর্যন্ত তার এলাকায় দুইটি মসজিদ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন মন্দিরের উন্নয়নে দান করেছেন অর্থ। এলাকার কেউ অসুস্থ বা কন্যাদায়গ্রস্থ হয়ে তার কাছে গিয়ে কখনো বিমুখ হতে হয়নি। কয়েক বছর আগে গ্রামের বাড়ি দাদপুরে তার পিতার জমিতেই বানিয়েছেন একটি পাকা বাড়ি।
[৬] নির্বাচন প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম ঋতু বলেন, সত্যি কথা বলতে নির্বাচন কি তা বুঝিনি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে দাড় করিয়েছে। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামীগ করে। আমার বাবার মারা যাওয়ার সময় বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। তাই যতদিন তোরা বেঁচে থাকবি আওয়ামী লীগের বাইরে যাবি না, নৌকায় ভোট দিবি। এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। প্রয়াত বাবার কথায় নৌকায় ভোট দিলেও কখনো সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা হয়নি। ভোটে জয়ী হলে জীবনের বাকিটা সময় নিজ গ্রামসহ ইউনিয়নবাসির সেবা করে যাব। দলের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের সম্প্রদায়ের জন্য ভোটাধিকার ও নানান সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের সাথে তার অনেক দিনের পরিচয়, তিনি আমাকে অনেক ভালবাসেন বলে যোগ করেন।
[৭] কথা প্রসঙ্গে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতু আরো বলেন, আর দশজন স্বাভাবিক নারী পুরুষের মত না হলেও আমার কোন দুঃখ নেই। আল্লাহ আমাকে সুস্থ্যভাবে পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রেখেছেন এতেই আমি সন্তুষ্ট। সবথেকে বেশি কষ্ট পায় যখন শুনি আমার এলাকার কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না অথবা মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না। এমন সংবাদ পেলেই আমার সাধ্য মত চেষ্টা করি তাদের পাশে দাড়াতে।
[৮] এর আগে গত উপজেলা নির্বাচনে পাশর্^বতী উপজেলা কোটচাদপুরের পিংকি খাতুন নামে এক হিজড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সে দেশের মধ্যে তৃতীয় লিংগের প্রথম জনপ্রতিনির স্বীকৃতি পায়।
[৯] ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শাকিল ও সাগর হোসেন জানান, তৃতীয় লিঙ্গ হিজড়া সম্প্রদায়ের রিতু আমাদের গ্রামেরই সন্তান। সে তাদের গ্রামের উন্নয়নে ও অসহায় গ্রামবাসীদের সহযোগীতা করে সবাইকে আপন করে নিয়েছেন। তার মত একজন মানুষ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়নে গতি বাড়বে বলে যোগ করেন তারা।