আনিস তপন: [২] শনিবার গাজীপুরের নিজ বাসায় সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগ থেকে সদ্য আজীবন বহিষ্কার হওয়া সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
[৩] তিনি বলেন, আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আজ এই পর্যায়ে এসেছি। বঙ্গবন্ধু আমার আদর্শ, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার অভিভাবক এবং আওয়ামী লীগ আমার অস্তিত্ব। আওয়ামী লীগ আমার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে।
[৪] জন্ম থেকেই পিতা-মাতার দেয়া শিক্ষা অনুযায়ী আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত ও গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে একর পর এক ষড়যন্ত্র হয়ে আসছে।
[৫] এই ষড়যন্ত্রকারীরা মেয়র নির্বাচনকালে আওয়ামী লীগের বেশ ধরে ‘জয়বাংলা ধানের শীষ’ বলে শ্লোগান দিয়েছে। এরাই অপকৌশলে, অরাজনৈতিক পন্থায় আমার পরিবারের, সংগঠন ও সমর্থকদের ক্ষতি করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
[৬] এমনকি আমাকে হত্যাসহ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র পদ থেকে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছে। আজ তারাই আমাকে অত্যন্ত বেদনার স্থানে, কষ্টের স্থানে নিয়ে আসতে সফল হয়েছে।ষড়যন্ত্রকারীদের মিথ্যা অপপ্রচারে আজ আমার বেদনাদায়ক পরিণতি ।
[৭] মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সব কাউন্সিলর ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশের সর্ববৃহত এই সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলাম। এই নগরকে বসবাসের উপযোগী করতে স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে প্রায় আট হাজার বিঘা জমি চেয়ে নিয়েছি।
[৮] ৮০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রায় শেষ করে এনেছি। একাজে প্রায় ৩২ হাজার বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট নিজেদের উদ্যোগে সরিয়ে নিয়েছে। এসব রাস্তা শুধুমাত্র আমার ব্যবহারের জন্য নয় এবং এজন্য সরকারের কোন অর্থ ব্যয় হয়নি।
[৯] আমি মেয়র হিসেবে এই নগরবাসীর কাছ থেকে এসব জমি চেয়ে নিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামকে শহর বানানোর কাজটি শুরু করেছিলাম।
[১০] সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় দুই হাজার ৮০০ কারখানা রয়েছে। দল এবং সিটি কর্পোরেশন চালানোর জন্য কখনো কারো কাছ থেকে একটি টাকাও নেইনি।
[১১] অথচ মিথ্যাবাদী, ষড়যন্ত্রকারীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছে, আমি ইন্ডাস্ট্রিগুলো থেকে টাকা নিয়েছি। রাস্তা বানানোর কাজে স্থানীয়দের জমি আত্মসাৎ করেছি। যা কোনভাবেই সত্য নয়। বরং উন্নয়ন কাজ চলাকালে কারো কোন ক্ষতি হলে তা সমাধান করেছি।
[১২] সাংগঠনিক ভিত্তির কারণে সারাদেশের মধ্যে গাজীপুরের আওয়ামী সংগঠন ভাল অবস্থায় আছে জানিয়ে মেয়র বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করাতেই এই সফলতা এসেছে।
[১৩] প্রধানমন্ত্রী যখন আমেরিকায়, আমি দেশের বাইরে, গাজীপুরের সিনিয়র নেতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক যখন তুরস্কে তখন বিভিন্ন সময়ে আমার বিভিন্ন বক্তব্যের মূল কথা বাদ দিয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে বিকৃতভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা এডিট করে প্রচার করেছে।
[১৪] অথচ যারা ঘরের ভেতরে গিয়ে গোপনে কথা সংগ্রহ করেছে, সড়কে গাড়ি পুড়িয়েছে এবং কারখানার দরজায় আগুন দিয়েছে তাদের কোন বিচার হয়নি।
[১৫] কাজ করতে গিয়ে কোন ভুল হয়ত করে থাকতে পারি। কিন্তু কোন অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্ত হইনি। ভুল এক জিনিস, অন্যায় এক জিনিস আর পাপ আরেক জিনিস। অন্যায় হলে তাতে আমার বিচার হলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এখানে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে দল থেকে বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা আমার জন্য বেদনাদায়ক। আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছি না।
[১৬] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে তিনি কারো ওপর কোন অন্যায় বিচার হোক সেটা চাইবেন না। আমি দলের কাছে আবেদন জানাবো, আমার প্রতি যে অন্যায় করা হয়েছে, যে অবিচার করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে সব ভুল ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে তার প্রতিকার চাইব।
[১৭] অত্যন্ত দুঃখের এবং বেদনার বিষয় আমাকে আজ এমন একটি শব্দের সঙ্গে জড়িত করা হয়েছে যাতে আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে না যেতে পারি। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, আমার ন্যায় বিচার পাওয়ার যদি কোন রাস্তা থাকে তবে সেই পরামর্শ দেয়ার।
[১৮] প্রধানমন্ত্রীকে ‘মা’ সম্বোধন করে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, দলে কোন পদ নয় একজন সমর্থক হিসেবে দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চাই। কারণ বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ছাড়া আমার জীবনে কিছু নাই এবং ভবিষ্যতেও হবে না। এসময় কর্মী-সমর্থকদের ধৈর্য ধরে ও শান্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
[১৯] তিনি আরও বলেন, এরপরও আওয়ামী লীগ ও আমার অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমি তা মাথা পেতে নিব।
[২০] আমার দলের প্রধান আমাকে বিনা কারণে ফাঁসিকাষ্ঠে যেতে বললেও আমি বিনা প্রশ্নে ফাঁসির দড়ি গলায় দিব। সম্পাদনা: প্রিয়াঙ্কা আচার্য্য
আপনার মতামত লিখুন :