‘খালিদ খলিল
[১] ‘হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটির উৎপত্তি ১৭৪৫ সালের দিকে। মূলত খ্রিস্টীয় ধর্ম থেকে হয়েছে। ‘হ্যালোইন’ শব্দের অর্থ ‘শোধিত সন্ধ্যা’ বা ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। এই শব্দটি স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ইভ’ থেকে এসেছে। স্কটে ব্যবহৃত ‘ইভ’ শব্দটি সংকুচিত বা সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘ইন’ হয়ে যায়। এভাবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালোজ’ ইভ’ শব্দটি ‘হ্যালোইন’-এ রূপান্তরিত হয়। যদিও ‘অল হ্যালোজ’ শব্দটি প্রাচীন ইংরেজিতে পাওয়া যায়, তবে শব্দটি ১৫৫৬ সালের পরে আর ব্যবহৃত হয়নি।
[২] অনেক পণ্ডিতের মতে, ‘হ্যালোইন’ বা ‘অল হ্যালোজ ইভ’ হলো খ্রিস্ট ধর্মের একটি বার্ষিক উৎসব যা প্রাথমিকভাবে কেলটিক ফসল কাটার উৎসব দ্বারা প্রভাবিত। অন্যান্য পপণ্ডিতদের মতে, এই উৎসবটির স্বতন্ত্র উৎপত্তি সামহেন থেকে এবং এর মূলে সরাসরি খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাব বিদ্যমান। [৩] হ্যালোইন উৎসবে পালিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে ‘ট্রিক-অর-ট্রিট’, ‘বনফায়ার’ বা অগ্ন্যুৎসব, আজব পোশাকের পার্টি, ভৌতিক স্থান ভ্রমণ, ভয়ের চলচ্চিত্র দেখা ইত্যাদি। আইরিশ ও স্কটিশ অভিবাসীরা ১৯ শো শতকে এই ঐতিহ্য উত্তর আমেরিকাতে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও হ্যালোইন উদযাপন শুরু করে। বর্তমানে পশ্চিমা বিশে^র অনেকগুলো দেশে হ্যালোইন পালিত হয়, যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, পুয়ের্তো রিকো এবং যুক্তরাজ্য। এছাড়া এশিয়ার জাপানে এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডেও হ্যালোইন পালিত হয়।
[৪] একটি বার্ষিক উদ্যাপন, ছুটির দিন যা প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে পালিত হয় ৩১ অক্টোবর তারিখে, ‘অল হ্যালোজ’ ডে বা সমস্ত হ্যালোজ দিবসে পাশ্চাত্য খ্রিস্টীয় ভোজোৎসবের প্রাক্কালে। লিটার্জিকাল বছরের এই দিনটি নিবেদন করা হয় মৃত, সাধু (হ্যালোজ), শহীদ এবং সমস্ত বিশ্বস্ত বিদেহী বিশ্বাসীদের স্মরণ করে। হ্যালোইন উৎসবের প্রাক্কালে যেই মূল ধারণা বা থিম অনুসরণ করা হয় তাহলো ‘হাস্যরস ও উপহাসের সাহায্যে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখমুখি হওয়া’।
[৫] হ্যালোইন মৃত এবং আত্মাদের রাত্রি। আইরিশ, যুক্তরাজ্য, ওয়েলশ সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ্বাস করতো যে প্রত্যেক নতুন বছরের আগের রাতে (৩১ অক্টোবর) সাহেইন, মৃত্যুর দেবতা, আঁধারের রাজপুত্র, সব মৃত আত্মা ডাক দেয়। এই দিন মহাশূন্য এবং সময়ের সমস্ত আইনকানুন মনে হয় স্থগিত করা হয় এবং জীবিতদের বিশ্বে যোগদান করতে মৃত আত্মাদের অনুমোদন করে। তারা আরও বিশ্বাস করতো যে মৃত্যুর কারণে তারা অমর যুবক হয়ে একটি জমিতে বসবাস করতো এবং আনন্দে ডাকা হতো Tir nan Oge। মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতো যে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড অঞ্চলের ছোট পাহাড়ে কখনো কখনো মৃতরা পরীদের সঙ্গে থাকে। একটি লোককাহিনি থেকে বর্ণিত আছে যে সমস্ত মৃত ব্যক্তিরা ৩১ অক্টোবর রাত্রিতে জীবিতদের বিশ্বে আসে আগামী বছরের নতুন দেহ নেওয়ার জন্য। এজন্য গ্রামবাসীরা এই খারাপ আত্মাদের থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা নেয়। এই প্রথাটি ছিলো পবিত্র বেদি আগুন বন্ধ করা এবং নতুন আগুন জ্বালানো হতো পরবর্তী প্রভাতে। আইরিশ, যুক্তরাজ্যবাসী কেল্টদিগের পুরোহিতরা তারা মিলিত হতো একটি অন্ধকার ওক (পবিত্র গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হতো) বনের ছোট পাহাড়ে নতুন আগুন জ্বালানোর জন্য এবং বীজ ও প্রাণী উৎসর্গ করতো।
আগুনের চারদিকে নাচতো এবং গাইতো প্রভাত পর্যন্ত, পথ অনুমোদন করেতো সৌর বছর এবং আঁধার ঋতু মধ্যে। যখন প্রভাত হয়, আইরিশ, যুক্তরাজ্যবাসী কেল্টদিগের পরোহিতরা প্রতি পরিবার থেকে জ্বালানো অগ্নির কয়লা পরিধান করতো। [৬] এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন উদযাপনে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয় এবং এ পর্যন্ত ১২ জন মানুষ নিহত হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি বন্দুকধারীদের গোলাগুলি ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।