রাজু চৌধুরী : চাঞ্চল্যকর “ড্রাইভার শাহ আলম” হত্যাকান্ডের রহস্য ২৪ ঘন্টার মধ্যে উদ্ঘাটন করল পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার একটি টিম।
৩১ অক্টোবর রোববার পিবিআই জানায়, বাঁশখালীর পুকুরিয়া থেকে উদ্ধার করা সেই বস্তাবন্দি মরদেহ চট্টগ্রাম নগরী থেকে নিখোঁজ গাড়ি চালক শাহ আলমের। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। নগরীর ডাবলমুরিং থানার চৌমুহনী চাড়িয়া পাড়া থেকে শনিবার দুপুরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন শহিদুল ইসলাম কায়সার প্রকাশ বেলাল এবং নুরুল আমিন রনি।
পুলিশ জানায়, শাহ আলমের গাড়িতে বিভিন্ন সময় বৈধ স্বর্ণ পরিবহন করা হতো, সেই তথ্য আসামিদের না দেয়ায় খুন হন তিনি। বেলালের দেখানো মতে পুকুরিয়া খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হাতুড়িও উদ্ধার করে পিবিআই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিদর্শক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘বাঁশখালীর পুকুরিয়ায় বস্তাবন্দি মরদেহ পাওয়া গেছে শুনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যাই।
মরদেহটি কিছুটা গলিত ছিল, তবুও তার আঙুলের ছাপ নেয়ার চেষ্টা করি। ছাপের মাধ্যমে জানতে পারি মৃত ব্যক্তির নাম শাহ আলম। তার বাবার নাম চান মিয়া। ঠিকানা দেয়া আছে আগ্রাবাদ ব্যাপারি পাড়া। ’তিনি জানান, পরে পরিবারের লোকজনকে খবর দেয়া হলে তারা মরদেহ শনাক্ত করেন। ওইদিন মধ্যরাতে নিহতের মেয়ে মেয়ে আয়েশা আক্তার বাঁশখালী থানায় অজ্ঞানামা ব্যক্তিদেরকে আসামী করে সূত্রোক্ত মামলাটি দায়ের করেন। পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকা নির্দেশে ।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এর সার্বিক নির্দেশনায় এবং পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান এর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু এবং বাঁশখালী থানাধীন তৈলার দ্বীপ ব্রীজের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনা করা হয়। তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তে জানতে পারি ঘটনার চারদিন আগে নিখোঁজ হয়েছেন শাহ আলম। নগরীর কোতোয়ালী থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন শাহ আলমের পরিবার। শাহ আলম মূলত গাড়ি চালাক। ঘটনার দিন গাড়ি নিয়ে মালিককে শহর থেকে পটিয়া নেয়ার কথা।
মালিকের দাবি, ২৬ তারিখ সকাল ১০ টার দিকে পটিয়া গিয়ে ভূমি অফিসে সারাদিন কাজ করে চারটার দিকে শহরের কোর্ট বিল্ডিং তাকে নামিয়ে দেন শাহ আলম। কল লিস্ট চেক করেও মালিকের সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় নি।’ শহর থেকে বের হওয়ার মুখের নতুন ব্রিজে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলাম আমরা। এতে দেখা যায় শাহ আলম যে গাড়ি চালাতেন, সেই গাড়িটি ২৬ আর ২৭ তারিখ মোট ৫ বার আসা-যাওয়া করেছে।
এর মধ্যে ২৬ তারিখ গাড়িটির নম্বর প্লেট থাকলেও ২৭ তারিখ দেখা যাচ্ছে নম্বর প্লেট খোলা। এতে সন্দেহ হয় আমাদের। ২৭ তারিখ ৫ টা ২৮ মিনিটে গাড়িটি শহর থেকে বের হয়। আবার ওইদিন ৮ টা ২৬ মিনিটে বাঁশখালীর তৈলারদ্বীপ ব্রিজ পার হয় গাড়িটি। আবার ৮ টা ৩৮ মিনিটে তৈলারদ্বীপ ব্রিজ দিয়ে শহরের দিকে আসে।’আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ও কল লিস্টের মাধ্যমে ২৭ তারিখ গাড়িটি যে চালিয়েছে তাকে শনাক্ত করি। তার নাম শহিদুল ইসলাম কায়সার প্রকাশ বেলাল। ৩০ তারিখ দুপুর ২টার দিকে ডবলমুরিংয়ের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞেসাবাদ করলে খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন তিনি।
পরে তাকে নিয়ে মরদেহ উদ্ধারের স্থানে গিয়ে খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত হাতুড়িটি উদ্ধার করি। ’কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাইয়ে তারপর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যার কথা জানায় বেলাল। তাকে খুন করা হয় কর্ণফুলীর মইজ্জারটেকের আহসানিয়া পাড়ায়, বেলালের রড সিমেন্ট বিক্রয়ের দোকানে। পরে সেখান থেকে শাহ আলমের সেন্ডেল, রক্তাক্ত একটি বস্তা, ঘুমের ওষুধসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। এস আই শাহাদাত বলেন, ‘বেলালের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নুরুল আমিন রনিকেও গ্রেপ্তার করি। প্রাথমিকভাবে বেলাল জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় বিদেশ থেকে বৈধ উপায়ে নিয়ে আসা স্বর্ণের বার শাহ আলমের গাড়িতে পরিবহন করা হতো। সেই তথ্য জানতে চেয়েছিলেন হত্যাকারীরা কিন্তু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে শাহ আলমকে খুন করে।