আনিস তপন : [২] বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভায় এ কথা জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
[৩] এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাকে হত্যা করার আমরা মর্মাহত হয়েছি। কারণ তিনি রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করছিলেন। মুহিবুল্লাহর হত্য ঘটনাকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাতে পারব।
[৪] জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মায়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ আরসা যুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি কক্সবাজার ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেকগুলো দল/উপদল নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সক্রিয় রয়েছে।
[৫] এরমধ্যে স্থানীয় কিছু রোহিঙ্গা দল/উপদল রয়েছে, যারা প্রত্যাবাসন বিরোধী। বিপরীতে বহু ভাষায় পারদর্শী রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ মায়ানমারের এসব নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে বিশে^র বিভিন্ন দেশের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছিলেন। এভাবে নিজেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছিলেন মুহিবুল্লাহ। যা স্থানীয় রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দল/উপদল ভালভাবে গ্রহণ করছিল না বিধায় মুহিবুল্লার প্রতি বিরুপ মনোভাবাসম্পন্ন গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
[৬] মুহিবুল্লাহ হত্যা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা নিশ্চিত যাদেরকে আটক করা হয়েছে তারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। খুনের মোটিভ কী ছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা জানতে পারবো।
[৭] রোহিঙ্গা বসবাসরত এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সন্ধ্যার পর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ভাসানচরের কোনো নৌ যোগাযোগ থাকবে না। এমনটি এসময় ভাসানচর থেকে নোয়াখালী কিংবা হাতিয়ার যাতায়াতও বন্ধ থাকবে।
[৮] তাছাড়া কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর ভেতরে আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হবে। এজন্য এপিবিএন, কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হবে। ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, আনসার ও র্যাবের যৌথ টহল আরও বৃদ্ধি করা হবে। ক্যাম্পের বাইরে সব সময় সতর্ক থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব।
[৮] ক্যাম্পে মাদক প্রবেশ ও বিক্রি রোধে তদারকি বাড়ানো হবে এবং এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হবে। চোরাচালান প্রতিরোধে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল আরও বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে উখিয়া ও টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার বেশ কিছু হয়েছে, আরও হবে।
[৯] রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিনিয়ত দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় চেষ্টা চলছে।
[১০] রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ও নতুনদের তালিকাভুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।