লেলিন চৌধুরী: দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, ‘কুমিল্লার ঘটনা একটি সাজানো কা ছিলো, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এসব করা হচ্ছে।’ কুমিল্লা শহরের একটি পূজামন্ডপে পবিত্র কোরআন রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার দুষ্কর্মটি স্থানীয় পুলিশ রুখে দিতে পারেনি। ঘটনাটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা দিবালোকের স্পষ্ট ছিলো। এই ঘটনার জের ধরে সারাদেশে কী ঘটতে পারে সে বিষয়টি বোঝার জন্য আইনস্টাইন অথবা নিউটন হওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু আমরা দেখলাম সরকারের পক্ষ থেকে সময়োপযোগী দ্রæততায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলো না। ফলে দেশের বিভিন্নস্থানে হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী ঘটনা সহজেই ঘটে গেলো। মুসলমানের লেবাশধারী কিছু বর্বর পশুর আক্রমণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো হিন্দু ধর্মাবলম্বী অনেকগুলো মানুষের জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদ। কিছু ‘বন্যপশু’র দেওয়া আগুনে পুড়ে গিয়েছে রংপুরের একটি হিন্দুপাড়ার সবগুলো বাড়িঘর।
কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সরকার সারাদেশের প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারতো। সরকার পরিচালনাকারী ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর মতো নিজ নিজ এলাকায় দাঁড়িয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা গর্ত থেকে বের হওয়ার সাহস পেতো না। সংসদের বিরোধীদল নিশ্চুপ। সরকারের বাইরে থাকা বৃহত্তম দলটি সরকারকে দোষ দেওয়ার সুযোগটি লুফে নিলো কিন্তু দুর্বৃত্তদের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ালো না। ইসলামপন্থি শান্তিবাদী দলগুলো শান্তির বাণী নিয়ে এগিয়ে এলো না। প্রগতিশীল দলগুলো সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারতো। সেসব কিছুই হলো না। যেন তাব ঘটে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো। কুমিল্লার থেকে সারাদেশ হয়ে পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া পর্যন্ত যা ঘটলো এতে সরকার ‘বেকায়দা’য় পড়েছে কিনা জানি না কিন্তু দেশের সকল শুভ ও কল্যাণকামী মানুষ এবং মানবতা বেকায়দায় পড়েছে- এটা নিশ্চিত জানি। আজ বাংলাদেশ কাঁদছে। এই কান্না অগ্নিবর্ষণে পরিণত হবে কী?