সাকিব এ চৌধুরী: বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতের একটি আলোচিত নাম নাঈমুল ইসলাম খান। তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি নিজ হাতে গড়েছেন উল্লেখসংখ্যক সংবাদপত্র এবং তৈরি করেছেন অসংখ্য সাংবাদিক। দেশের মানুষের কাছেও সংবাদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেশ পরিচিতি। সাধারণ মানুষের কাছে টকশোর মাধ্যমে পরিচিতি। সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে নিয়মিত কথা বলা সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানকে নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা। সমালোচনা। নাঈমুল ইসলাম খানের টকশোতে কথা বলা নিয়ে যেমনি তার রয়েছে সমর্থক তেমনি রয়েছে তার মন্তব্যের উল্লেখ সংখ্যক বিরোধিতাকারীও। যেকোনো প্রশ্নের মুখামুখি হতে প্রস্তুত থাকা নাঈমুল ইসলাম খানকে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অনলাইন টকশোতে বেশ রাগান্বিত হতে দেখা যায়। তবে টকশোতে সিনিয়র কিংবা সমসাময়িক কারো সঙ্গে রাগান্বিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি তাকে। নাঈমুল ইসলাম খানকে নিয়ে একটি লেখায় সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেন, ‘টকশো’তে তিনি কখনোই জানতে চান না তার সঙ্গে কে আছেন’। সেই নাঈমুল ইসলাম খান ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখেছেন, কেন বাংলাদেশে বিশমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠছে ‘না’।
একটি হলেও বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবি এই সম্পাদকের। সংবাদ সম্মেলনের সম্পাদক/সাংবাদিকরা কী ধরনের প্রশ্ন করছেন সেটা নিয়ে মানুষের কোনো আগ্রহ নিকটতম অতীতেও ছিলো না এখনো নেই। তবে অন্য একটা কারণে মানুষ আগ্রহ নিয়ে থাকে যে এবারের সংবাদ সম্মেলনটা গতবারের তুলনায় কেমন হলো। তারপরও পজেটিভভাবেই এবার জনাব খানের প্রশ্নটা মানুষের মনে ধরেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারও করছেন কেউ কেউ। তাৎক্ষণিকভাবে সেদিন একটা জিনিস সেদিন খেয়াল করলাম, দেশের যতোগুলো মিডিয়া হাউজ আছে এমন কোনো মিডিয়া হাউজ মনে হয় পাওয়া যাবে না, যেখানে নাঈমুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে কিংবা তার সঙ্গে কাজ করেননি এমন কেউ নেই সেখানে। দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে এতো সমকর্মী বাংলাদেশের আর কোনো সম্পাদকের আছে বলে আমার মনে হয় না। একাধিক সাংবাদিককে দেখেছি যারা নাঈমুল ইসলাম খানের সঙ্গে কাজ করেছেন কিন্তু তাদের ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ’ একেবারে বিপরীত। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তারা সবাই তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। রিভিউও মারাত্মক ধরনের পজেটিভ। তাদের মতে, ‘তাদের মতো একেবারে ফ্রেসারদের একটা ভালো জায়গায় কাজ করতে দিয়ে যেই অভিজ্ঞতা নাঈমুল ইসলাম খান তাদের দিয়েছেন সেটা ঢাকায় আর ক’জন দেন’।
জানা যায় এবং দেখাও যায়, নাঈমুল ইসলাম খানের প্রতিষ্ঠানের দরজা সবসময় সবার জন্য যেমন ঢুকার সময়ও খোলা থাকে তেমননি বের হওয়ার সময়ও খোলা থাকে। নতুনরা যদি কাজ শেখার জন্যও তার কাছে যায় সেই কাজটাইবা এ যুগে শেখাচ্ছেন কয়জন? বিপুল সংখ্যক সংবাদিককে সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠিত করতে যখন একজন নাঈমুল ইসলাম খানের নাম বারবার এদিক-সেদিক থেকে আসে এমনকি দেশের নারী সাংবাদিকতার প্রসারে যার নাম চলে আসে সেই ব্যক্তিটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও কম কীসে। মনে যদি ভুল না হয় আমার তাহলে খুব সম্ভবত তিনি একটি মিডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে যেমন নাঈমুল ইসলাম খান যৌক্তিক চিন্তা করেন, ঠিক তেমনি এদেশের মিডিয়া নিয়েও মানুষ চিন্তা করে। গবেষণা বাদ দিয়ে শিক্ষকরা দলীয় লেজুড়বৃত্তি করছেন যেমনি সিংহভাগ নাঈমুল ইসলাম খানেরাও সে পথেই হাঁটছেন। সরকারও যেমনি গষেণার টাকা দেয় না তেমনি মিডিয়াগুলোও তার রিপোর্টারদের বছরে একবারের জন্য হলেও বই কেনার জন্য টাকা দেয় না!
একজন নাঈমুল ইসলাম খান যেমনি ফেসবুকে গণমাধ্যামের কথা লিখে যান নিয়মিতভাবে, তেমনি আরেকজন অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনও বিরামহীনভাবেই লিখে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। কিন্তু সমস্যা যখন সব জায়গায়ই তখন বলে, লিখে কিংবা আবদার করে দীর্ঘদিনের সংকট দ্রতই তা আমাদের বাপ-চাচারা কাটাতে পারবেন বলে অন্তত আমার মনে হয় না। তবু আশা দেখতে হবে, হতে হবে আগে নিজেকে ঠিক তাহলেই একদিন না একদিন একজন নাঈমুল ইসলাম খান ভালোভাবেই তার শ্রেষ্ঠটা নিয়ে বিকশিত হতে পারবেন। ব্যবসায়িক গ্রপের টাকায় কিংবা তাদের সঙ্গে যুক্ত না হয়েও প্রতিষ্ঠা করবেন মনের মতো সংবাদের প্রতিষ্ঠান আর ড. কামরুল হাসানরা সরকারের টাকায় গবেষণার আশায় বসে না থেকে গবেষণা করবেন ব্যবসায়িক গ্রপগুলোর টাকায়।