ডেস্ক রিপোর্ট: স্কুল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা সেবার জন্য ৫৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এতো বছরেও জেলার মানুষ জানেন না এর খোঁজ। শিক্ষিত মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে যেন অচেনা-অজানা একটা নাম বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র। অথচ এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। বার্তা২৪
ফরিদপুর জেলা সদরের মুজিব সড়কে ১৯৬৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত। এর বয়স ৫৬ বছর। দীর্ঘ এতো বছরেও যেন প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ এ সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না। প্রচার-প্রচারণা, কার্যক্রমে পিছিয়ে থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় এর সেবা পৌঁছাতে ব্যর্থ এ প্রতিষ্ঠানটি।
জানা গেছে, সরকারি এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আওতাধীন ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা মিলিয়ে ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আওতাভুক্ত। প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৪ হাজার ৭৮৬ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে দুজন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে আছেন একজন, সিনিয়র স্টাফ নার্স একজন, একজন ফার্মাসিস্ট থাকলেও করোনাকালীন সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেশনে রয়েছেন তিনি। আছেন একজন এমএলএস।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এলাকাটি জনবহুল। প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড আছে, কিন্তু বেশ পুরনো। মানুষের চোখে পড়ে কম। ভেতরের পরিবেশ রোগীহীন। অনেকটা সুনশান নীরবতা। সকল স্টাফের উপস্থিতি নেই। একাধিক পদ রয়েছে শূন্য।
চলতি বছরের আগস্ট মাসের কার্যক্রম অনুযায়ী, এখানে চিকিৎসা গ্রহণকারীর সংখ্যা ৩৪৯ জন। প্রতিদিন গড়ে আগতদের সংখ্যা মাত্র ১৫ জন। এছাড়াও ২৯ টি কার্যক্রমের মধ্যে বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ। যদিও করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।
১৯২০-২১ অর্থ বছরের তালিকা এম এস আর সামগ্রী বাৎসরিক চাহিদাপত্র অনুযায়ী ১৯ প্রকারের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ (যার পরিমান সর্বনিম্ন দুই হাজার থেকে দশ হাজার পিস পর্যন্ত) বরাদ্দ পায় প্রতিষ্ঠানটি।
দূর্গাপুর ওমেদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুনরোজ সুলতানা জানান, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আছে ঠিকই তবে প্রচার প্রচারণা অনেক কম।
আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন খান বলেন, এ বিষয়ে খুব ভালো একটা বলতে পারবো না। স্কুলটি বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত কি না তাও তিনি জানেন না।
গোয়ালচামট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বিবেকানন্দ বসু জানান, আমি শিক্ষক থাকাকালীন অল্প কিছু কার্যক্রম ছিল। তবে খুব একটা বেশি নয়। দীর্ঘ এতো বছরেও এ সম্পর্কে বিশেষ করে শিক্ষিতমহল না জানা, না চেনাটা খুবই দুঃখজনক।
ফরিদপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবী শেখ সেলিমুজ্জামান রুকু বলেন, আমি একজন অভিভাবক হিসেবে, আইনজীবী হিসেবে এই প্রথম আপনার মাধ্যমে এর নাম শুনলাম।
জেলা সদরের ইশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী স্বর্ণাবা জাহান শ্রেষ্ঠার বাবা, ফরিদপুরের একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক, আইনজীবী, কবি ও সাহিত্যিক গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন জানান, রাস্তায় চলাচলের সময় প্রতিষ্ঠানের নাম দেখেছি মাত্র। কিন্তু এর কার্যক্রম সম্পর্কে একেবারেই জানা নেই।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নিবেদিতা দাস জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম চালু রয়েছে। সঠিকভাবে দ্বায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে স্কুলে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত কার্যক্রম চালানো হয়। শিক্ষার্থীরা যদি না আসে তাহলে আমরা কি করতে পারি। আমরাতো বসে থাকি তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য।
এ বিষয়ে জানতে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান এর মুঠোফোনে ফোন করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ইশরাত জাহান ইলা বলেন, প্রতিদিন কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিমাসে ৮ টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হয়। তাছাড়া কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। অফিস চালানোর জন্য যা দরকার তা এখানে পর্যাপ্ত নেই। স্কুল পরিদর্শনের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ নেই। নিজেদের খরচ করতে হয়।
আপনার মতামত লিখুন :