শুভদীপ চন্দ: একটি বয়স পর ছেলেদের জন্য বিয়ে করা পাহাড় ডিঙ্গানোর মতো কঠিন কাজ। আরাম থেকে সব জড়তার উৎপত্তি হয়। সব কাটলেও একাকীত্বের জড়তা কাটতে চায় না। শিশু যতো সহজে আগুনকে খেলনা ভাবতে পারে, বড়রা অত সহজে পারে না। এখন কথা হচ্ছে সে বয়সটি তো ছোট বয়স পার না হয়ে আসেনি। সে আসেনি। কিন্তু যে তীর্থযাত্রী পথের ধারে বসে পড়েছে- বিগ্রহ তাকে আর টানেনা। সে শুধু বসে বসে আর কে চলতে চলতে বসে গেলো সে খোঁজই রাখতে পারে। দরকার জিনিসটা খুব দরকার জীবনকে বড় রাস্তায় চালানোর জন্য। সব যদি বাহুল্যের ঘরে পড়ে, জীবন অনেকটা মেঘ হয়ে যায়। বজ্রসহ পতন আর ভেসে বেড়ানো ছাড়া কোনো কাজ থাকে না।
রঙ বদলাতে দেখি মানুষদের। জীবিত মানুষ খুব দ্রুত মৃতের ঘনিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে। এক রোগী মারা গেলো ব্যাপক সমারোহ নিয়ে কান্না উৎসব শুরু হলো। অথচ তারা চিকিৎসাই করেনি। অর্থের অভাব ছিলো না। বড় পরিবার, হাসপাতালের পাশে বাসা। একদল কাঁদছে, অন্যদল স্বান্তনা দিচ্ছে। কেউ চিরদিন থাকেনা-এ কঠিন দার্শনিক তত্ত্বের ব্যাপকতর প্রচারণা চালাচ্ছে। মনে হচ্ছিলো এ অতীব সত্য প্রমাণের দায় ছিলো ওই মৃত বৃদ্ধের একার। মানুষ একমাত্র প্রাণী যে তার চোখের জলকেও অপবিত্র করে ফেলেছে। বহু দীনতা একসঙ্গে হাত ধরাধরি করে থাকলেও চোখে লাগে না। চোখে লাগে বহু সমারোহের মাঝে সামান্য দীনতা। নইলে উপজেলার কজন মানুষ সঠিক চিকিৎসা নিয়ে মরে। কজন আর সুশিক্ষা পায়। নাগরিক সুবিধার কথা ক'জন আর জানে। ‘এটা এরকম নয়’ বলতে গেলে কোনো রকম সেটা বলতে হয়,সেটাই তো কেউ জানে না। অর্থের প্রাচুর্য আছে বলেই হয়তো তাদের আচরণ চোখে লাগছে।
এক আত্মীয়ের ঢাকার বনানীতে নিজেদের বাসা,অথচ মামাতো ভাইয়ের জন্য আজিজে মেস খুঁজে দিতে বলছে। ‘বললাম তোমাদের বাসা তো অনেক বড়। ওখানে নাও।’ বলে কলেজ দূরত্বের জন্য নাকি এটি অসুবিধার। আর সেও থাকতে চায় না। আরও বললো এরকম নাকি এখন কেউ থাকেও না। এ সামান্য দীনতা এতো বড় সমারোহ কে কীভাবে তুচ্ছ করছে অবাক হতে হয়। কোভিড চিকিৎসা এখন অনেক বদলেছে। ঢাকার বড় বেসরকারি গুলোয় মনোক্লোনাল এন্টিবডি দিয়ে চিকিৎসা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সর্বপ্রথম এ চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এখন এটি ডব্লিউএইচও’র অনুমোদিত। প্রায় এক লাখ পনেরো হাজার টাকা লাগে। উপজেলার মানুষ এটি জানবে না।এখানে এটি বেশি গুরুত্বপূর্ণও না। এখনে বিষয় মূল্য এবং বিনামূল্য। বিনামূল্যে চিকিৎসা হিসেবে আলকাতরা দিলে এখানে আলকাতরাই চলবে। আমরা ফ্রি ঔষধ দিয়ে একটি কোভিড প্যাকেট বানিয়েছি। যেখানে প্যারাসিটামল ছাড়া সবগুলো প্রায় অপ্রয়োজনীয়।
সুস্থতাকে পাখির চোখ না করলে সুস্থতা আসবে না। চিকিৎসা সেবার মূল কাজ অসুস্থতা থেকে মুক্তি। আমাদের এখানে চলে শান্তনা। কারণ শান্তনাতে জনপ্রিয়তা আছে।এরমাঝে আরেক আত্মহত্যার গল্প শুনি। বেশকিছুদিন আগে ঘটেছে সেটি। কিসের অভাব ছিলো তাদের? শিক্ষা, রুচি, সন্তান, অর্থ, প্রেম- সবকিছু নিয়ে এক পরিপূর্ণ সংসার। আত্মহত্যাকারী বউটি নিজেকে গলিয়ে পুরো ব্যারিস্টার সাহেবের মনের মতো বানিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা কী হলো? এক ভোরবেলায় উঠে রাজপুত্র-রাজকন্যা-রাজমাতা-রাজদাসীরা দেখলো এক আস্ত রাজপ্রাসাদ চোরাবালিতে ডুবে গেছে। আসলে ভালোবাসায় মানিয়ে নেওয়া এবং ভালোবাসায় মেনে নেওয়া- দুইটি কখনোই এক নয়। নিজেকে হারিয়ে অন্যের মনের মতো গড়তে চাইলে না অন্যকে পুরোপুরি পাওয়া যায় না নিজেকে।
বৃষ্টি শুরু হলো অসংখ্য বাজের শব্দে। দেবরাজ ইন্দ্র যেন শত মেঘ নিয়ে এ শহর আক্রমণ করছেন। তার আগে আকাশ সীমান্ত থেকে কামান দাগছেন। শত অশ্বারোহী এরপর হুড়মুড় করে নেমে আসলো। বিকেল বৃষ্টির মাদকতা অন্যরকম। সন্ধ্যা নামার আগেই রাত্রি নেমে আসে। আড়াই বছরের খোকা মেঘেদের হুহুঙ্কার শুনে নিজ দস্যুপনা ছেড়ে মায়ের কোলে এসে লুকোয়। একটু তাপমাত্রাও এসেছে তার। প্রতি লেখায় কত জনের কত গল্প বলি, নিজ জীবন গল্প বলা হয় না। শুধু টের পাই সস্তা হচ্ছে। লেখা দ্বারা বিকৃত হতে হতে আরকিছু বাকি নেই। মানুষের চোখে আমি প্রচণ্ড অসুখী অভাবী বন্ধুহীন বিষণ্ন একজন মানুষ, যে বিক্রি হওয়ার অপেক্ষায় পড়ে আছি। আত্মবিক্রিত জীবন অনেক ভালো আত্মবিকৃত জীবনের চেয়ে- এখন টের পাই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :