সালেহ্ বিপ্লব, আখিরুজ্জামান সোহান: [২] গরীব দেশগুলো টিকা বৈষম্যের শিকার, কম দামে সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তি সহায়তা এবং মেধাস্বত্ত্ব পেলে বাংলাদেশও বিপুল পরিমাণ টিকা উৎপাদন করতে পারবে।
[৩] বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে শেখ হাসিনা বক্তব্য শুরু করেন। ২৭ মিনিটের বক্তৃতায় তিনি কোভিড মহামারী কাটিয়ে উন্নত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
[৪] তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের সৃষ্টি, সমাধান তাদেরই করতে হবে, রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।রাখাইনে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনই স্থায়ী সমাধানের একমাত্র পথ।
[৫] যথারীতি বাংলায় ভাষণ দেন তিনি, স্মরণ করেন ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেয়ার কথা। জাতির জনক সেদিন অংশীদারিত্বমূলক বিশ্বের কথা বলেছিলেন, আজো পৃথিবীতে সেই বাস্তবতা রয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
[৬] তিনি বলেন, আমরা এমন এক বিশ্ব গড়বো- যেখানে কেউ পিছে পড়ে থাকবে না, এগিয়ে যাবে।
[৭] বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কোভিড সংক্রমণ আশংকার চেয়ে কম হয়েছে। তৃণমূল থেকে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার কারণে এটা হয়েছে। প্রথম দিকেই যথাযথ উদ্যোগ নেয়াও একটা কারণ।
[৮] তিনি বলেন, মহামারী আরও কিছুদিন থাকবে বলে মনে হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় নতুন অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা লাগবে। তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন।
[৯] শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমত টিকা সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী করতে হবে। গত বছরও আমি টিকাকে বৈশ্বিক জনস্বার্থ সামগ্রী ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলাম। বিশ্বনেতারা কেউ কেউ সমর্থন করেছিলেন কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। নিম্ন আয়ের দেশগুলো এক শতাংশের কম পেয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে টিকা বৈষম্য নিরসন করতে হবে।
[১০] অবিলম্বে টিকা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে সক্ষম দেশগুলোকে উৎপাদনের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান শেখ হাসিনা।
[১১] তিনি আরো বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা কঠিন হয়ে যাবে।ধনী অথবা দরিদ্র- কোনো দেশই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ নয়। তাই আমি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নিঃসরণের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।
[১২] তিনি বলেন, মহামারীর প্রভাবে সারাবিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে এক্ষেত্রে ডিজিটাল বিনিয়োগের জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাচ্ছি।
[১৩] স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে নিতে প্রণোদনাভিত্তিক সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানান শেখ হাসিনা।
[১৪] তিনি অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোকে তাদের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ এবং তাদের কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
[১৫] রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক মহলের জোরালো উদ্যোগ ও সমর্থন আশা করি। মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকেদের ফেরত নেয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আশা করি, আসিয়ান নেতারা তাদের পদক্ষেপ আরো বেগবান করবেন।
[১৬] শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল দক্ষিণ এশিয়া আমাদের প্রত্যাশা। আফগানিস্তানের ভবিষ্যত বিনির্মাণ আফগানিস্তানের জনগণের ওপরই নির্ভর করে। বাংলাদেশ সেদেশের জনগনের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
[১৭] সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, এ কথা আবারো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে আমরা বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার কাজ করছি। আমরা সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণে বিশ্বাস করি। আসুন হাতে হাত রেখে কাজ করি।