শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৬:৩৩ বিকাল
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০৬:৩৩ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ভাঙ্গনের মুখে মধুমতি নদী তীরবর্তী বসতবাড়ী, খোলা আকাশের নিচে শতাধীক পরিবার

আসাদুজ্জামান বাবুল: [২] গত ১০ দিনে গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের মোল্লাপাড়া ও সিকদারপাড়ায় মধুমতি নদী ভাঙ্গনে কমপক্ষে ৪ কিলোমিটার এলাকার ২৫টি বসতবাড়ী ও কমপক্ষে ২০০ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

[৩] পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফাইজুর রহমান বলেছেন, জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মোল্লাপাড়ায় ভয়াবহ ভাংগন দেখা দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ভাঙ্গনে প্রতিরোধের কাজ চলছে। তবে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা আমাদের হাতে নেই। প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

[৪] গোপালগঞ্জ জেলা শহর থেকে কমপক্ষে ১৫-২০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সাবেক প্রয়াত: এমপি মোল্লা জালালের গ্রামের বাড়ী বড়ফা। মোল্লা জালালের নামে এই ইউনিয়নের নামকরন করা হয়েছে জালালাবাদ ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ইছাখালী মোল্লাপাড়া ও সিকদার পাড়ায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন। ভাঙ্গন কবলে পড়ে গত ১০ দিনে জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালি গ্রামের মোল্লাপাড়া ও সিকদারপাড়ায় কমপক্ষে ৪ কিলোমিটার এলাকার ২৫টি বসতবাড়ী ও কমপক্ষে ২০০ একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে ভেসে গেছে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বই খাতা কলমসহ নানান প্রজাতির অসংখ্য গাছপালা ।

[৫] নদী ভাংঙ্গনে সবকিছু হারিয়ে সরকারী রাস্তার উপরে খোলা আকাশের নিচে না খেয়ে রাত্রীযাপন করছে গৃহবধু রোকেয়া বেগম স্বামী আর সন্তানদের সঙ্গেঁ আর একপাশে গবাদিপশু আরেক পাশে বসবাস গৃহবধু রোকেয়া বেগমের। সরোজমিন ঘটনাস্থল পরিদশনকালে রোকেয়া বেগম জানান, সপ্তাহ খানিক আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছেন। বসতবাড়ী হারিয়ে রাস্তার উপর আশ্যয় নিয়েছি। এখন চেয়ারম্যান মেম্বাররা বলছেন এখানেও নাকি থাকা যাবে না। আমরা এখন যাবো কোথায়। কে দেবে আমাদের আশ্রয় আর কে দেবে খাবার?

[৬] কষ্টের বর্ণনা দিয়ে কলেজ ছাত্রী হুমায়ারা আক্তার তনুয়া জানায়, জীবন জীবিকা ও লেখাপড়ার অথ যোগান দেয়ার মতো আমাদের যে শেষ সম্বলটুকু ছিলো তাও নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া ফসলী জমি ও বসতবাড়ী হারিয়ে, আমি এখন অন্ধ বাবা, ছোট বোন ও ভাই বোনের দুই শিশু বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে নানান বয়সের কমপক্ষে দেড়শতাধিক মানুষের সঙ্গেঁ সরকারী রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার শিক্ষিত দুটি ভাই সরকারী-বেসরকারী চাকুরীর জন্য নানান জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। কিন্ত টাকার অভাবে চাকুরী হয় না। টাকা দেয়ারম তো সামথ্য নাই বলেই চাকুরী হয় না। জমিতে যে ফসল হতো তা দিয়ে আমাদের সংসার ও আমার লেখাপড়ার খরচ চলে যেতো। সেই শেষ সম্বলটুকুও নদীতে ভেঙ্গে গেছে। যেদিন আমাদের বসতবাড়ীটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ঠিক সেদিনই আমার ছোট বোন সুরাইয়া রাস্তার উপরে সন্তান প্রশব করে। আমার ভাবীরও একটি বাচ্চা হয়েছে। বসতবাড়ী ভেংগে যাওয়ায় দুটি শিশু বাচ্চা ও অন্ধ বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এখন সরকারী রাস্তার উপরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।

[৭] ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মো. আব্দুল হান্নান মোল্লা জানিয়েছেন, আমাদের এখানে আষাড় মাস থেকে নদী ভাংগন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে একাধিকবার গিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। ডিসি সাহেব এখানে আসছেন এবং বলছেন, এখানে বাঁশ গেড়ে ব্লক ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দিলেও তিনি তা মানেননি। ঢাকা এবং ফরিদপুর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষরা এসে ৪ কিলোমিটার ভাঙ্গন প্রতিরোধের কথা বলেছেন কিন্ত স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাদের কথা শোনেননি। উনি নিজের মতো করে মাত্র দেড়শ মিটার জায়গায় নামমাত্র বালুর বস্তা ফেলেছেন।

[৮] গত ১০ দিনে ১৫ থেকে ২০/২৫টা ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরো প্রায় দেড়শতাধিক বসতবাড়ী ভাঙনে হুমকির মুখে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কমপক্ষে দেড়শতাধিক মানুষ শিশু বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে সরকারী রাস্তার উপরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। কেউ কেউ আত্বীয়স্বজনের বাড়ীতে গিয়ে রাত্রী যাপন করছেন। না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। পাথর এবং ব্লক দিয়ে ভাংন প্রডিতরোধের দাবী জানিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

[৯] পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো, ফাইজুর রহমান বলেছেন, জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মোল্লাপাড়ায় ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ভাঙ্গন প্রতিরোধের কাজ চলছে। তবে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা আমাদের হাতে নেই। প্রয়োজনীয় অথ পাওয়া গেলে স্থায়ীভাবে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়