মারুফ কামাল খান: মনের মধ্যে কতো কথার আকুলি বিকুলি। সব কথা তো আর সব সময় খুলে বলা যায় না। তবু আজ মুখতসর কটি কথা বলি। তার কিছু বর্তমানের বিবরণ আর কিছু আগামীর আভাস। কথাগুলো অনেকেই কম-বেশি জানেন। [১] বাংলাদেশের চলতি শাসকেরা এ বছরের নাম দিয়েছিলেন ‘মুজিব বর্ষ’। কিন্তু আয়রনি বা প্রহসন হলো, তারা নিজেরাই এ বছরে মুজিবের চেয়ে বেশি জপেছেন জিয়ার নাম। [২] এই যামানায় লুটেরা ও অপরাধীরা সবচে উঁচু গলায় কথা বলে চলছে এবং ছড়ি ঘুরিয়ে সকলের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এইভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ একটা নিছিদ্র কম্পার্টমেন্টে জমে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে।
[৩] সবক্ষেত্রে অবাধ দুর্নীতি ও লুটপাট অতীতের সকল সীমা ছাড়ালেও এবারকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য, ডিজিটালাইজেশনের নামে ইন্টারনেট সংযোগকে মহাপ্রতারণা এবং জনগণের অর্থ লোপাট ও পাচারের হাতিয়ার করা হয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল সম্পদের কিঞ্চিৎ হদিস ও খোঁজ-খবর ইতোমধ্যে নানান হাতে পৌঁছে গেছে। [৪] নতুন সিনেমা রিলিজ হওয়ার তোড়জোর চলছে। সেটা টের পেয়ে শেষ রক্ষার জন্য নানা রকম নয়া ফরমুলা নিয়ে গবেষণা চলছে। এরমধ্যে আছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই শাসন-পদ্ধতি বদলে ফেলার ফরমুলাও। তারা এখনও ভাবছে, ফরমুলা পাল্টে টিকে থাকা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু এখন তাদের জন্য এর চেয়ে বেশি দরকার বিনা রক্তক্ষয়ে শান্তিতে ক্ষমতার পালাবদল বা সেফ এক্সিটের ফরমুলা। [৫] চারদিকে এক বদ বাতাস বইতে শুরু করেছে। এ বায়ুপ্রবাহ কতোটা প্রবল হবে এবং কারে উড়াবে, কারে ঝরাবে তা ঠিক এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কাজেই হুঁশিয়ার সকলে। কেউ বাড়াবাড়ি করবেন না। বহুত হয়েছে। সমঝোতার মনোভাব ফেরান এবং নিশ্চিত করুন সেফ ল্যান্ডিং। [৬] সামনের মাসগুলোতে হাওয়া বদলের আভাস টের পাবে সবাই।
নতুন ঝাপ্টায় ঘাট হবে অঘাট, আর অঘাট হবে ঘাট। অনেক প্রতিপত্তিশালীর পতন ঘটবে এবং নাম না জানা বা ধারণার বাইরের অনেকেই হাজির হয়ে যাবে রঙ্গমঞ্চে। [৭] এগুলোকে কেউ চাইলে নিছক কল্পনা বা স্বপ্নবিলাস বলে ধরে নিতে পারেন, তাতে আমার আপত্তি নেই। আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষমতাও রাখি না। এগুলো সমাজবিজ্ঞানের সূত্র ধরে এবং প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে আমার পর্যবেক্ষণ। যারা অনুঘটক ও নিয়ামক তারা চাইলে অবস্থান ও কৌশল বদলের মাধ্যমে ভবিষ্যৎকে ডানে-বামে অর্থাৎ ভালো ও মন্দ দু দিকেই ঘোরাতে পারেন।
[৮] তবে একটা অনুরোধ, ইতিহাসের আস্তাকুঁড়টা কোনোদিকে, সবসময় সব পক্ষের লোকেরাই সেটার খোঁজ রাখবেন। কেননা কারও ক্ষণিকের ভুলে বা কারও সম্বিৎ ফেরার কারণে গৃহীত শোধনমূলক পদক্ষেপে কিন্তু এক ঝটকায় হিরো থেকে ভিলেইন এবং ভিলেইন থেকে হিরো হয়ে যেতে পারে।
[৯] রাজনীতিতে ঔদ্ধত্য নয় বিনয় দেখান, হুকুমজারির অভ্যাস ছেড়ে আহ্বান জানাতে ও প্রণোদিত করতে শিখুন। নিজে যতোই জ্ঞানী হোন না কেন, নিঃস্বার্থ ও উপযুক্ত পরামর্শকমণ্ডলীর মাধ্যমে নিজের সিদ্ধান্তের যথার্থতা যাচাই করে নেবেন। [১০] যে পরিবর্তনই আসুক, মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার সম্বলিত আধুনিক গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকেই কিন্তু আলটিমেটলি যেতে হবে আমাদের। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :