দিপু তৌহিদুল: আপনি সাধারণ বলেই এক মাস বিদ্যুৎ কিংবা ওয়াসার পানির বিল হজম করার ক্ষমতা রাখেন না, কিন্তু শক্ত পৃষ্ঠপোষক থাকলে বছরের পর বছরই আটকে রাখতে পারবেন। বাংলাদেশে ই কমার্স বিজনেস, ব্যাংক সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি হতে যতো আর্থিক ইতরামি দেখবেন - তার সবকিছুর পেছনে বিশাল বিশাল শক্ত রাজনৈতিক ব্যাকআপ রয়েছে, নইলে এসব করা মোটেও সম্ভব নয়। লক্ষ্য করবেন এসব কু-কাণ্ডের হোতাদের কোনো শক্ত বিচার হয় না, বরং তাদের সাময়িক জেলে নিয়ে গিয়ে পুরো বিষয়টাকে সামাল দেওয়া হয়, এই সামাল যারা দেয় তারাই ব্যাকআপ। ব্যাকআপরা কখনও সামনে আসবে না। আপনারই বুঝে নিতে হবে কারা আসল ব্যাকআপ। আপনার মগজের দৌড়টা খুব সীমিত বলেই ব্যাকআপদের কথা কল্পনা শক্তিকে আন্দোলিত করে না। আর করে না বলেই বারবার আর্থিক ধরাটা খেয়ে যান। যতোদিন না, নিজেদের বুদ্ধি খাটিয়ে ব্যাকআপদের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ না হবেন ততোদিনই এটা চলতেই থাকবে। দায়টা আপনার, কারণ দলপ্রীতি করতে গিয়ে নিজে বাঁশ খেয়ে মুখে নিচের কুলুখ ওপরের মুখে বারবার আটকে দিচ্ছেন বাংলাদেশে ৯৬ হতে যতো শেয়ার কেলেঙ্কারি হয়েছে, তার কোনো একটির কঠিন বিচার হতে দেখেছেন? না দেখেননি। এই না দেখাটার পেছনের মূল কারণ একটাই, ওপর মহলের মিলকে জুলকে খাইদাই। দেশের আর্থিক সিস্টেমটাকে এমনভাবে চালানো হচ্ছে, যাতে আপনার কাজ শুধু একটাই, রাজনৈতিক ওপর মহলগুলোর নির্দেশিত বড় বড় লোভনীয় কথাগুলো শুনে শুনে নিজের হাতের টাকাটা বিনিয়োগের নামে প্রতারক সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়া। এসব সিন্ডিকেট বিশাল আকারে ও তাদের ক্ষমতার উৎস একটাই - রাজনৈতিক নেতারা। দেশের ব্যাংক আর সঞ্চয়পত্রর বিনিয়োগের মুনাফা হার পরিকল্পিতভাবে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে করে আপনি এলোমেলো ও দুষ্ট আর্থিক কাণ্ডে নিজের পুরো দেহটাকে ঢুকিয়ে দেন।
সরাসরি তো আর দেশের সাধারণ মানুষের পকেটের টাকা হুট করে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শিল্পিত কায়দায় নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বলদ সাধারণ শুধু আর্থিক কেলেঙ্কারির সামনের মানুষটার দিকেই তাকায়, কারণ তাদের চোখের ক্ষমতা খুব সীমিত। এই সীমিত করে রাখার কাজটাও আসলে কৌশলে করা হচ্ছে। দেশের আর্থিক কেলেঙ্কারির শিকার হওয়া সাধারণ মানুষের ফলাফলটা শেষে কি দাড়ায়ঃ তারা কপর্দক শুন্য ভিক্ষুক হয়ে পড়ে, ঘরের বউ আর মেয়েরা চরম বিপদে পড়ে পরিবার বাঁচাতে গিয়ে দেহ বিক্রি করতে শুরু করে, ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে নিম্ন মানের দাস কর্মে লিপ্ত হয়, বাড়িঘর থাকলে বিক্রি হয়ে যায়, সুদে ঋণ নিয়ে বাঁচতে গিয়ে আরও ধ্বংস হয়, ঘরে উঠতি বয়সের মেয়ে থাকলে যারতার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে মেয়েটার জীবন বিষময় করে ফেলে। আমি কয়েকটা পরিণতির কথা বলেছি, চাইলে আপনি আরও যোগ করতে পারবেন। নিশ্চিত থাকুন যারা বিভিন্ন কায়দায় দেশের সাধারণের টাকা হজম করে ফেলেছে, তার কোনো সুরাহা হবে না। বরং যারা সাধারণের অর্থ তছরুপ করেছে - আগামীতে তারাই আমাদের লিডটা করবে।
কে না জানে লিড করার জন্য এখনকার এই সময় অর্থ শক্তিটাই মুখ্য। অতিতে শুনেছিলাম, এদেশের সাধারণ হচ্ছে মাথা নষ্ট পাগলীর মতো- পাগলীরে রেপ করে কষিয়ে চড় মেরে ছেড়ে দিলে নাকি সে রেপের বদলে বারবার চড় মারছে চড় মারছে বলতে থাকে, অর্থাৎ পাগলী আসল রেপের ঘটনা বেমালুম ভুলে যায়। সাধারণ হারামজাদা নাগরিকরাও কিন্তু দিন শেষে অর্থ হজমকারীদেরই কুর্নিশ করে চলবে। এটাই আমাদের আসল সংস্কৃতি। যারা এমন টাইপ তাদের সঙ্গে এমনটাই বারবার ঘটবে। বদমাশদের খুশি খুশি বিনিয়োগ প্রোগ্রামে পকেট খালি করেছেন? যান এবার দলীয় প্রিয় নেতাদের ছবিতে চুমু খেয়ে উদোম দেহে দলের ছাতা মাথায় দিয়ে হাতে মাটির সানকি নিয়ে পথে নেমে পড়ুন।