লিহান লিমা: [২] সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি আফগানিস্তান ছাড়ার আগেই মহামারি এবং দীর্ঘকালীন খরা কৃষি নির্ভর অর্থনীতির এই দেশটিকে কাবু করে ফেলে। ১৫ আগস্ট তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর আন্তর্জাতিক তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে।
[৩] কাবুলসহ দেশটির বিভিন্ন শহরের রাস্তায়, অলি-গলিতে নিজেদের গৃহস্থালী সামগ্রী বিক্রি করতে ছুটছেন আফগানরা।
[৪] কাবুলের চামন ই হোজরি পাড়ার রাস্তার দু পাশে রেফ্রিজারেটর, কুশন, পাখা, কার্পেট, বালিশ, কম্বল, রুপার জিনিসপত্র, পর্দা, বিছানা, গদি ও রান্নার জিনিসপত্রসহ শতশত টুকিটাকি জিনিস বিক্রি হচ্ছে। গত ২০ বছর ধরে একটু একটু করে জোড়ানো গৃহস্থালী সামগ্রী এখন খাবারের জন্য অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
[৫] ১৫ আগস্টের পর থেকেই আফগানরা নগদ অর্থ সংকটের মুখে পড়েছেন। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক তহবিলে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে।
[৬] আফগানিস্তান জুড়েও ব্যাংক বন্ধ ছিলো এবং স্বয়ংক্রিয় টেলর মেশিনগুলো কাজ করছিলো না। অনেক ব্যাংক পুনরায় খোলা হয়েছে সপ্তাহিক উত্তোলন সীমা ২৩২ ডলার বেঁধে দেয়া হয়েছিলো। শত শত নারী পুরুষ রাত-ভর ব্যাংকের সামনে টাকা উত্তোলন করে লাইন ধরে রয়েছেন। কিন্তু চারটি কার্পেট বিক্রি করতে আসা শুকরুল্লাহের পরিবারের মুখে খাবার তোলার জন্য ব্যাংকের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকার সময় নেই। তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্য ৩৩। আমার প্রতিদিনই চলার মতো আটা, চাল ও তেল কিনতে হবে।
[৭] জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, আফগানিস্তানে দারিদ্র ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। এবং ২০২২ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৯৭ শতাংশের বেশি জনসংখ্যা দরিদ্রসীমার নিচে পতিত হতে পারে। সোমবার জাতিসংঘ প্রধান অ্যান্তনিও গুতেরেস জেনেভায় আফগানিস্তানের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা উত্তোলন করতে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন ডাকেন। এই তহবিলের এক তৃতীয়াংশই ব্যয় করা হবে খাদ্য সহায়তায়।
[৮] আফগানিস্তানের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ার সতর্ক বার্তা দিয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলো। বিশ্বব্যাংকের মতে, মোট দেশজ উৎপাদনের কমপক্ষে ১০ শতাংশ বিদেশী সাহয্য থেকে আসলে একটি দেশকে সাহায্য নির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গত ২০ বছরে আফগানিস্তানের জিডিপির ৪০ শতাংশই এসেছে বিদেশী সাহায্য থেকে এবং এখন অনেক দেশ তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে দেশটি অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।
[৯] এই সপ্তাহের শুরুতে আটলান্টিক কাউন্সিলে কথা বলতে গিয়ে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর আজমল আহমদি বলেন, বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হলে আফগানিস্তানের জিডিজি ১০-২০ শতাংশ সংকুচিত হবে।
[১০] তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তার সরকার আশা করছে চীন ও রাশিয়া পশ্চিমা অর্থনৈতিক সহায়তার ঘাটতি পূরণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেইজিং বা মস্কো কেউই তা পারে নি।
[১১] আসন্ন সংকট এবং বর্তমান তারল্য সংকট ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানুষজন খাবার সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে যা পারে তাই বিক্রি করছে। আরো খারাপ পরিস্থিতি পার করছেন ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা।
[১২] দোকানদার আব্দুল কাদি বলেন, প্রতিদিন যখন আমরা থালায় ভাত উঠবে কি না তা ভাবি তখন কিভাবে লাভের কথা চিন্তা করা যায়? তিনি পাশ্ববর্তী এক দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বলেন, কেউ কি এই ছবি তুলে আশরাফ গণিকে পাঠাতে পারবেন। তাকে এটি পাঠিয়ে বলুন, ‘বিদেশে আপনি সুন্দর দিন কাটাচ্ছেন, আর দেশকে কি বানিয়ে গিয়েছেন, দেখুন।’
আপনার মতামত লিখুন :