ওমর ফারুক লুক্স : বাংলাদেশের, এমনকি উপমহাদেশের যে সকল মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতা চায়, তাদের বেশির ভাগই আবার ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কি- তা জানেই না। যেমন, এক ধর্মের বন্ধু তার আরেক ধর্মের বন্ধুর মৃত্যুতে কাঁদছে। এক ধর্মের বন্ধু তার ভিন্ন ধর্মের বন্ধুর সঙ্গে এক থালায় খাবার খাচ্ছে। কিংবা দুই ধর্মের দুই শিশু তাদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় পোশাক পরে একসঙ্গে খেলছে।
-এগুলো চমৎকার সব দৃশ্য, কোনো সন্দেহ নেই। আর এটাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। তবে এসব কোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বা সমাজের দৃশ্য নয়। কারণ আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখাতে যেয়ে রাষ্ট্রের নাগরিকদের ধর্মীয় পরিচয়কে বারবার সামনে আনছি, তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে বড়ো করে দেখাচ্ছি এবং তাদের ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে আলাদা করছি।
অথচ একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বা সমাজের চরিত্র এবং দায়িত্ব হচ্ছে- তার নাগরিকদের ধর্মীয় পরিচয়কে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রাখা, তাদের ধর্মীয় পরিচয় আলোচনায় না আনা এবং তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের মাধ্যমে আলাদা না করা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে তাদের পরিচয়- তারা দুজন শুধুই ‘বন্ধু’। তাদের দুজনের ধর্মীয় পরিচয় কখনোই আমাদের সামনে আসার কথা নয়, বা আলোচনার বিষয় নয়।
মূল কথা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখতে সুন্দর, তবে তা ধর্মনিরপেক্ষার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আপনি কি আপনার রাষ্ট্রে এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চান, নাকি ধর্মনিরপেক্ষতাও চান? কারণ রাষ্ট্র আর সমাজ ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি টিকে থাকলে সেখানে কখনোই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কারণ সেক্ষেত্রে রাষ্ট্র আর সমাজের রাজনীতি, সংগঠন, আর নাগরিকেরা তখন সব বিষয়েই বারবার তাদের ধর্মকে টেনে আনবে, তাদের ধর্মকে বড়ো করে দেখাবে এবং ধর্মীয় পরিচয়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে আলাদা করবে।
ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে- ধর্মকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের রাজনীতি, রাষ্ট্রের আইন, রাষ্ট্রীয় সকল সংগঠন ও সমাজ ব্যবস্থা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করা। ধর্মকে শুধুই রাষ্ট্রের নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং চর্চার বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখা, ধর্মের সৌন্দর্য বর্ণনা করা নয়। ফেসবুক থেকে