রাশিদ রিয়াজ : আপনার ঈমান টেকসই নয়। অনেকবার প্রতিজ্ঞা করেন পাপ থেকে দূরে থাকবেন, চলবেন পূণ্যের পথে। কিন্তু পারেন না। আপনার চারপাশ আপনার ওপর এমন প্রভাব বিস্তার করে আছে শত চেষ্টার পর আপনি ব্যর্থ হন, আর আপনার মন ভেঙ্গে যায়। তাহলে আপনার জেনে নেয়া উচিত কেনো এমন হয়।
প্রথমত লক্ষ্য করেন দেখবেন কোনো পাপ যদি আপনি করে বসেন তাহলে আপনার মধ্যে কোনো অনুশোচনা আসবে না। তার মানে ঈমান মজবুত নয়। টেকসই নয়। আপনি পান করছেন কিন্তু হালাল নাকি হারাম তা বিবেচনা করছেন না। জুম্মার নামাজ মিস করেছেন তাতে আপনার মন খারাপ হচ্ছে না। এগুলো ঈমান দুর্বলতার লক্ষণ। রাসুল (সা:) বলেছেন আমার উম্মতদের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে যে খোলাখুলি বা জেনেশুনে পাপ করে তাকে ছাড়া। কারণ গুনাহ করছি কিন্তু চিন্তা করছি না কি করছি, কিভাবে করছি। চিন্তা করার সঙ্গে সঙ্গে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার কথা। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা। কিন্তু পাপ করার পরও তওবা না করলে তা ঈমান দুর্বলতার লক্ষণ। এপর্যায়ে আমাদের অবস্থান থাকলে খুবই চিন্তার বিষয়। আমাদের সজাগ হওয়া উচিত। সত্যিকারের ঈমানদার ব্যক্তিরা পাপ করে ফেল খুবই খারাপ বোধ করে। পাপবোধে তার অনুশোচনা হয়। আল্লাহ সুরা আল ইমরানের ১৩৫ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘ যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। [১] আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কে পাপ ক্ষমা করতে পারে? এবং তারা যা (অপরাধ) করে ফেলে, তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে না।’ সত্যিকারের ঈমানদার ব্যক্তি পাপ করে ফেললেই আল্লাহকে স্মরণ করবেন, তিনি আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করবেন। ক্ষমা চাইবেন। সেজদায় নত হবে। তার চোখে পানি চলে আসবে।
দ্বিতীয় লক্ষণ হচ্ছে ইবাদাত বা নামাজ পড়ার সময় এলেই খুবই অলসতা দেখানো। এখন না তখন। আজকে না কালকে। ওমুক দিন বা তমুক দিন থেকে ইত্যাদি। বিশেষত নামাজের ক্ষেত্রে। সুরা আন নিসার ১৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে, নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে। (১৪২) নিশ্চয় মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তিনিও তাদেরকে প্রতারিত করে থাকেন[১] এবং যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে[২] নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায়[৩] এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে।’ তার মানে যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় খুব অলসতার সঙ্গে দাঁড়ায়। তারা জানে না কেনো নামাজ পড়ছে। তারা জানে না কি পড়তে হবে। কি বলছেন ঈমাম সাহেব তার সুরায় তার মর্মার্থ কি? নামাজ কখন শেষ হবে তার জন্যে তার তর সয়না। নামাজে তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না। রোজায় তাদের কোনো আগ্রহ নেই। যদিও নামাজ পড়ে তাহলে তা কত তাড়াতাড়ি শেষ হবে যেনো শেষ হলেই সে বাঁচে। এগুলো হচ্ছে ঈমান দুর্বলতার সুস্পষ্ট লক্ষণ। ভণ্ডামী এর মূল কারণ। যা আমদের নামাজে অলসতা এনে দেয়।
তৃতীয়ত সে যখন বিপর্যয় পড়ে তখন ভীত হয়ে পড়ে। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। আমাদের সকলকে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কখনো আমরা চাকরি হারাই। কাজ নেই। প্রিয়জন দূরে চলে যায়। প্রিয় মানুষ মারা যায়। ইত্যাদি। এধরনের বিপদের মুখে আল্লাহর প্রতি অটুট ঈমান রাখতে হয়। এ পরিস্থিতিতে আপনি কি ধরণের আচরণ করেন তা আপনার ঈমানের লক্ষণ। আল্লাহতালা সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘যারা তাদের উপর কোন বিপদ এলে বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চিতভাবে তারই দিকে ফিরে যাব।’ এধরনের অভিব্যক্তি ঈমানদার ব্যক্তির ভাষ্য। কিন্তু যাদের দুর্বল ঈমান তারা চিৎকার করে বলে কেনো আমার ওপর এ বিপদ এল। আমি নামাজ পড়ি, দান খয়রাত করি। না না এটা হতে পারে না, ইত্যাদি। খুব কঠিন বলে মনে হলেও আমাদেরকে বুঝতে হবে যা কিছু আসে তা আল্লাহর তরফ থেকেই আসে। আমাদের তার ইচ্ছার ওপর অবিচল থাকতে হবে।
চতুর্থ লক্ষণ হচ্ছে আমাদের মনের কঠোরতা। কঠিন মন। দয়াহীন ও মায়াহীন। জুম্মার খুৎবা তার মনে কোনো আছর করে না। কোরান পড়ে বা শুনেও তার কোনো ভাবান্তর হয় না। আল্লাহর ভয়ে তার চোখে কোনো পানি আসে না। মনে দাগ কাটে না।
পঞ্চম লক্ষণ হচ্ছে ঔদ্ধত্য। রাসুল (সা:) বলেন, কারো মনে কোনো ঔদ্ধত্য থাকলে সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ঈমান দুর্বলতার আরেক কারণ অস্থিরতা। আর সপ্তম কারণ হচ্ছে পরশ্রীকাতরতা ও হিংসা। এসব লক্ষণের সবগুলো যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে তা ত্রুটিমুক্ত করতে চেষ্টা শুরু করা উচিত। দুই একটি থাকলেও তার অপসারণ জরুরি। আল্লাহ আমাদের তা অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।