সুতপা ভট্টাচার্য: আমি গড়পড়তা বাঙালি মেয়েদের চেয়ে অনেকটাই লম্বা হওয়ায় বাংলাদেশের সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী বহুকাল বডি শেমিংয়ের শিকার হয়েছি। এখন আমার যে বয়স এবং কাজের ধরন, তাতে আমি খুব মাপা গন্ডির মাঝে চলি, আজেবাজে কথা বলবে এমন মানুষের সাথে ওঠাবসা কম এবং অচেনা মানুষের বাজে মন্তব্য উপেক্ষা করতে শিখে গেছি। কিন্তু একটা সময় ছিল যখন আমি কুঁকড়ে যেতাম মানুষের কথায়। বহু কথার মধ্যে সবচেয়ে যেটা ভালো ছিল সেটা হলো, ‘তোমারে জানি ক্যামন দেখতে লাগে’। কিশোরী কি সদ্য তরুণী একটা মেয়ের জন্য যে কী ভয়াবহ একটা অনুভূতি, এখনো সেই সরল সোজা সিম্পল সেই আমার জন্য মায়া হয়। কী বোকা ছিলাম, কতো আনন্দ নষ্ট হয়েছে ফালতু লোকের অসুস্থ স্বভাবের জন্য।
এ দেশে আমাদের সবার কাজ হলো সবাইকে খারাপ ফিল করানো। একটু আগেই দেখলাম এক ভদ্রমহিলার ছবিতে দুনিয়ার লোকজন তাকে বলছে যে সে মোটা। যে মোটা সে আসলে জানে সে মোটা। শুকনা, লম্বা, খাটো, দাঁত উঁচু, ফর্সা, কালো সকলেই জানে সে দেখতে কেমন এবং বেশির ভাগ মানুষই নিজেকে নিয়ে খুব বেশি সন্তুষ্ট না, যে কারণেই হোক না কেন। তার ওপর এই মানসিক অত্যাচারটা না করলে ঠিক কী সমস্যা হয় মানুষের আমি বুঝি না। আমার এক পুরনো ছাত্রী কদিন আগে লিখেছে এমন শেমিংয়ের স্বীকার হয়ে। তাকে নাকি লোকজন বলছে যে স্লিম মেয়েরা তার বরকে নিয়ে নেবে। আমি যাকে বলে বাক্যহারা, একি! এতো যাদের দরদ কারো হেলথ নিয়ে তারা বরং নিজেরা জিম যাওয়ার সময় এই আনফিট মানুষকে সাথে নিয়ে যাক, না হয় শুকনা মানুষকে বিরিয়ানি রেঁধে খাওয়াক। এমনিতেই কত শত ঝামেলায় থাকে মানুষ, তার ওপর এতো লবন না ছেটালেও চলে।
বডি শেমিংয়ের সবচেয়ে বড় শিকার কমবয়সী ছেলেমেয়েরা। যারা এখনো নিজের আইডেন্টিটি তৈরি করতে পারেনি, তাদের বাহ্যিক চেহারা দিয়ে পরিচিত হতে হয় এই স্যাডিস্ট সমাজে। পরিচয় তৈরি হতে গেলেও অবশ্য রেহাই নেই, স্পাউস বা বাচ্চা নিয়ে শেমিং শুরু হয় তখন। কোণঠাসা মানুষ একপর্যায়ে অন্য কারও শেমিং শুরু করে নিজেরই অজান্তে। দুষ্টচক্র এক। দুনিয়ায় ভালো থাকতে অনেক কিছু লাগে না, অন্যের চোখের জল বা ম্লান হয়ে যাওয়া মুখ চোখ তো অবশ্যই লাগে না। নিরিবিলি নিজের মনে সবাই থাকুক না, কারো কোনো ক্ষতি না করে। এটুকু চাওয়া তো যেতেই পারে। ফেসবুক থেকে