মারুফ হাসান: [২] মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে ‘ব্লেজ’ নামে একটি রেমিটেন্স সুবিধা উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
[৩] আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমানের উপরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ১০ বছর পরে উন্নয়নের কোন স্তরে পৌঁছাবে সেই পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন করে।’
[৪] ক্যাশলেস সোসাইটি হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ। নগদ অর্থ লেনদেন হবে না। উন্নতির ধারাবাহিকতায় এমন পরিবেশের দিকে যাচ্ছে দেশ। ‘ব্লেজ’ সেবাটি সেই ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’র পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি অংশ, বলেও উল্লেখ করেন সজীব ওয়াজেদ জয়।
[৫] ব্লেজ পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সার্ভিসের সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং কার্যক্রমের নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন সপ্তাহে ৫দিন ব্যাংক খোলা। আবার বিদেশে যখন দিন তখন বাংলাদেশে রাত। এসব সীমাবদ্ধতার কারণে বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। ব্লেজ পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সার্ভিসে এই সীমাবদ্ধতা নেই। যে কোনো দিনে যে কোনো সময়ে ৫ সেকেন্ডে প্রেরিত টাকা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে।’
[৬] সজীব ওয়াজেদ বলেন, আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আয় প্রবাসীদের রেমিটেন্স। কিন্তু প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠাতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েন। আবার টাকা পাঠালেও তাদের স্বজনদের টাকা হাতে পেতে দুই-তিনদিন সময় লাগে। ডিজিটালের এ যুগে এমন সমস্যা আর থাকা উচিত নয়। সেজন্য এই ব্লেজ সার্ভিসের উদ্বোধন করা হলো।
[৬] জয় বলেন, আমাদের দেশে ৫ কোটি মানুষের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। তারা নগদ টাকার বিনিময়ে লেনদেন করছে। আর এই নগদ টাকার কারণে দেশে দূর্নীতি বাড়ছে, লুটপাট বাড়ছে। কিন্তু আমরা যখন নগদ বিহীন লেনদেনে চলে যাব তখন দূর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে।
[৭] সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সরকারি সকল ভাতা এখন আর নগদ টাকায় দেওয়া হচ্ছে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেওয়া হয়। এর ফলে যারা আগে গ্রামে টাকা বিতরণ করত তাদের টাকা চুরি করার একটা সুযোগ থাকত। কিন্তু আমরা সেই সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।
[৮] তিনি বলেন, আমার ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী স্বপ্ন বাংলাদেশের সকল ফিন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশন ক্যাশলেস হয়ে যাবে। এতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কীভাবে করবে তাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা।
[৯] তিনি আরও বলেন, তারা মোবাইল ফোনে টাকা পাবে। যে টাকাটা তারা একটা দোকানে গিয়ে খরচ করবে, সেটাও তারা মোবাইলে পেমেন্ট করে দেবে। তাদের হাতে আর ক্যাশ রাখার প্রয়োজন হবে না। তাদের কষ্ট করে আয় করা টাকাটা তাদের থেকে কেউ চুরি করে নেবে না। 'ব্লেজ’ সেবাটি সেই ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’র পথে এগিয়ে যাওয়ার একটি অংশ।
[১০] অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, করোনাকালীন সময়ে আমাদের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবায় প্রায় ১০ কোটি গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। এছাড়াও ইন্টার অপারেটবল ডিজিটাল ট্রাঞ্জেকশন প্ল্যাটফর্ম অলরেডি তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে ১৫টি ব্যাংক এবং একটি এমএফএস কোম্পানী পরীক্ষামুলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
[১০] তিনি বলেন, ইন্টার অপারেটবল ডিজিটাল ট্রাঞ্জেকশন প্ল্যাটফর্মটি এই মুজিব বর্ষেই দেশের মানুষকে উপহার দিতে চাই। যার ফলে আমাদের আর্থিক লেনদেন আরও বেশি দ্রুততার সাথে এবং স্বচ্ছতার সাথে শেষ করতে পারবো।
[১১] ব্লেজ-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থসহ ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মাত্র ৫ সেকেন্ডে বাংলাদেশে এসে জমা হবে।
[১২] বাংলাদেশে ৩৫টির মতো ব্যাংক ব্লেজ সেবাটি দিতে পারবে এবং সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা এই সেবা পাওয়া যাবে। হোম-পে, কিউক্যাশ ও সোনালী ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত এই ব্লেজ সেবার কারিগরি সহযোগিতা করেছে আইটিসিএল এবং আইসিটি বিভাগ।
[১৩] ব্লেজ-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান এতে যুক্ত ছিলেন।