প্রভাষ আমিন: গত কয়েকবছর ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার বিতর্কিত জন্মদিন পালন করা হয় না। এটা একধরনের নীরব প্রায়শ্চিত্ত। কিন্তু ২১ আগস্টের প্রায়শ্চিত্তটা এখনো করেনি বিএনপি। আদালতে প্রমাণিত হয়েছে ২১ আগস্টের ষড়যন্ত্র হয়েছে হাওয়া ভবনে, তারেক রহমান সরাসরি জড়িত, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপির মন্ত্রিসভার অন্তত দুজন সদস্য এ ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। ঘটনা প্রবাহে বিশ্বাস করার কারণ জন্মে যে, আগে না হলেও ঘটনার পর বেগম খালেদা জিয়াও ঘটনা জানতেন এবং তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করায় তার দায় আছে। বিএনপি যতদিন এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত না করবে, ততদিন তাদের রাজনীতিতে ফেরা কঠিনই হবে।
বিএনপির ওপর আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নে, মামলা-হামলার অনেক সমালোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের কাছ থেকে এমন স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত। মনে হতে পারে, বিএনপির ব্যাপারে শেখ হাসিনা একটু বেশিই নিষ্ঠুর। কিন্তু আপনি যখন শেখ হাসিনার অবস্থান থেকে ভাববেন, তখন তাকে অত নিষ্ঠুর মনে নাও হতে পারে। যারা তাকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করতে চেয়েছে, তিনি তাদের প্রতি সদয় থাকবেন না, এটা স্বাভাবিক। তিনি যদি পাল্টা গ্রেনেড মারতেন, তাহলে তাকে প্রতিশোধপরায়ণ বলা যেতে। আদতে তা না।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে ওয়ান-ইলাভেন সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার তা এগিয়ে নিয়েছে এবং আদালতের রায়ে কারাগারে গেছেন বেগম খালেদা জিয়া। আর তারেক রহমান পালিয়ে আছেন। একজন গ্রেনেড মেরে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন, আরেকজন আইনি ও রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছেন।
বিএনপিকে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে, অতীতে অপকর্মের জন্য অনুশোচনা করতে হবে, অপরাধের জন্য সাজা ভোগ করতে হবে। বিএনপি যদি অপরাধ ভুলে নতুন করে শুরু করতে চায়, তাহলেই কেবল আওয়ামী লীগ-বিএনপির মাঝখানের দেয়ালটি লঙ্ঘন করা যাবে। নইলে তা অলঙ্ঘনীয়ই থেকে যাবে। ২১ আগস্ট হয়ে থাকবে আমাদের রাজনীতির স্থায়ী বিভক্তি রেখা, টার্নিং পয়েন্ট।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ