লিহান লিমা: [২] তালেবানের দ্রুত ক্ষমতা দখল বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের স্তম্ভিত করেছে। প্রায় ২০ বছর ধরে মার্কিন সরকারের সহায়তার পরও মাত্র একমাসও টিকতে পারেনি এমন একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতা এসে পড়েছে ওয়াশিংটনের ঘাড়ে। দুই দশকের কাজ ও বিনিয়োগকে পেছনে ফেলে পশ্চিমা ও ইউরেপিয় দেশগুলো তাড়াতাড়ি তাদের কূটনৈতিক ও নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট
[৩] মঙ্গলবার ইউরোপীয় দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জরুরী বৈঠকে মধ্য এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের উপস্থিতি পুনর্জাগ্রত এবং শরণার্থীর ঢল তৈরি করার জন্য মার্কিন সিদ্ধান্তের সমালোচনার বিরল প্রস্তাব রাখেন। লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আর্টিস পাব্রিকস এঙ্গলবার একটি রেডিও সাক্ষাতকারে বলেন, ‘হুট করে সৈন্য প্রত্যাহার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। এর ফলে শুধুমাত্র একটি জাতি নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের মৃত্যুই ঘটানো হয় নি ইউরোপিয়দের ওপর সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এককভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।’ জার্মান রাজনীতিবিদরা ইতোমধ্যেই মার্কিন নীতির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসা পশ্চিমা রাজনীতির অন্যতম বড় পরাজয়।’ জার্মানির রক্ষণশীল চ্যান্সেলর প্রার্থী আরমিন ল্যাশেট বাহিনী প্রত্যাহারকে ‘ন্যাটো প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় পরাজয়’ বলে অভিহিত করেন।
[৪] মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া ইরান সমালোচনার সুযোগ গ্রহণ করেছে। জাতিসংঘে ইরানের মুখপাত্র শাহরুখ নাজেমি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রস্থানকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে মন্তব্য করেন।
[৫] চীনের জন্য মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ‘সুযোগ ও ঝুঁকি’ উভয়ই তৈরি করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেনকে ফোনে বলেছেন,‘মার্কিন বাহিনীর দ্রুত প্রস্থান একটি মারাত্মক বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে।’ সেই সঙ্গে তিনি একটি ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পন্ন একটি দেশে শাসনের বিদেশী মডেল প্রতিষ্ঠা করতে মার্কিন অক্ষমতাও টেনে আনেন।
[৬] ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির সভাপতি টোবিয়াস এলউড মিত্রদের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক পুনরুদ্ধার এবং জোট পুনর্গঠনে বাইডেনের প্রতিশ্রুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, ‘আমেরিকা কি সত্যি ফিরেছে।’
[৭] তবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন ওয়াল্ট বলেন, আফগানিস্তানে দীর্ঘ ও নিরর্থক যুদ্ধের সমাপ্তি ওয়াশিংটনকে আরো বড় বড় অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুগুলোকে মনোযোগ করতে সহায়তা করবে।
[৮] ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত নীতি বিষয়ক পরিচালক স্টিফেন পম্পান ও ওবামা প্রশাসনে হোয়াইট হাউসের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত দুই দশকে এই বাস্তবতা উপলদ্ধি হয়েছে যে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মানবাধিকার নীতিতে অগ্রসর হওয়া কঠিন।’ তিনি ২০১১ সালে লিবিয়ায় হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত করে বলেন, স্বৈরশাসক গাদ্দাফির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের সহায়তা করা লক্ষ থাকলেও তা দশকব্যাপী বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতাই বয়ে এনেছে। একই বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে আফগানিস্তানে। সেখানে স্বাস্থ্য ও নারীর অধিকার ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অর্জন হলেও দীর্ঘ দিনের মার্কিন উপস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে অক্ষম হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্র দপ্তরে যারা আছেন তাদের এইসব ইস্যুতে অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে।