নিউজ ডেস্ক: ইয়াবাপাচারের অন্যতম রুট চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ধরে ভয়াবহ মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) দেশে ঢুকছে কয়েক মাস ধরেই। সম্প্রতি আইস জব্দের ঘটনাও বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবার পাশাপাশি আইসের ‘আধিপত্য’ বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেক সন্তান এই নেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে।কালের কণ্ঠ
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরীর লালদীঘিরপাড় এলাকায় ৪৩০ গ্রাম আইসসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকা থেকে সাত দফায় আইস জব্দ করা হলো।
মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার হওয়া মো. নুরুল আফছারের (৫২) বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উলুবনিয়া গ্রামে। চট্টগ্রাম মহানগর
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ সালাম কবির জানান, আফছারকে এই আইস চট্টগ্রামে পাঠানোর জন্য দিয়েছেন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানার আজিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে একজনের কাছে এই চালান পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কার কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল, তা পুলিশ জানতে পেরেছে।
মোহাম্মদ সালাম কবির বলেন, ‘কিছু ধনী ঘরের মাদকসেবী সন্তান ভয়ংকর আইসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আগে যারা ইয়াবায় আসক্ত ছিল, মূলত তারাই আইসে ঝুঁকছে। এ ধরনের মাদকসেবী একই মাদক দীর্ঘদিন নেয় না। আরো বেশি নেশা হয়, সাধারণত এমন মাদকই তারা খোঁজে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, প্রতি গ্রাম আইসের দাম প্রায় ১০ হাজার টাকা। এক গ্রাম আইস কয়েকজন মিলে সেবন করতে পারে। নিম্নবিত্ত পরিবারের কারো পক্ষে আইস কেনা সম্ভব নয়। এ কারণে মাদকটি এখনো নিম্নবিত্ত পরিবারের মাদকাসক্তদের হাতে পৌঁছেনি।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইয়াবার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি নেশা হয় আইস সেবনে। ফলে শারীরিকভাবে মারাত্মক ক্ষতি হয় মাদকসেবীদের। কিন্তু নেশাগ্রস্তরা তা বুঝতে পারে না। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। ইয়াবার সঙ্গে এখন আইসও আসছে মিয়ানমার থেকে। ফলে বিজিবি, কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাবকেও তৎপরতা বাড়াতে হবে বলে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলছেন। তা না হলে দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ মাদকপাচারের মাধ্যমে মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে আধাকেজির বেশি আইস উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপর চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সাতটি অভিযানে উদ্ধার হয় তিন কেজি ৮৩০ গ্রাম আইস।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রথম আইস ধরা পড়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। খুলশী থানা এলাকা থেকে ১৪০ গ্রাম আইসসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরপর ৪ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ থানা এলাকায় দুই কেজি আইসসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত সেটিই ছিল জব্দ হওয়া সবচেয়ে বড় চালান। এরপর ১ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পুনরায় একই মাদক জব্দ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলা এলাকা থেকে। ওই দিন ২০০ গ্রাম আইসসহ গ্রেপ্তার হয় একজন। ১৭ জুন নগরীর কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকা থেকে পাঁচ গ্রাম আইসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১২ জুলাই রাতে কোতোয়ালি থানার ফিশারীঘাট এলাকা থেকে ৯৭৫ গ্রাম আইসসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর দুই দিন পর ১৪ জুলাই রাতে ৮০ গ্রাম আইসসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার উদ্ধার করা হলো ৪৩০ গ্রাম আইস।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইয়াবায় অ্যামফিটামিন থাকে ৫ শতাংশ। আর আইসের পুরোটাই অ্যামফিটামিন। তাই আইস ইয়াবার চেয়ে বেশি ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া তৈরি করে মানবদেহে। এই মাদকসেবনকারীদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সমস্যা হতে পারে। মানসিক অবসাদ বা বিষণ্নতার কারণে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে সেবনকারী।