রুবেল মজুমদার: [২] কুমিল্লায় নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার লুট এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারধরের অভিযোগে ব্রাহ্মণপাড়া থানার তিন এসআইসহ সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন এক গৃহবধূ।
[৩] বুধবার (১১ আগস্ট) ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী সালমা আক্তার বাদী হয়ে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং আমলি আদালতে এই মামলা দায়ের করেন।
[৪] মামলা আমলে নিয়ে বিচারক বেগম মিথিলা জাহান নিপা কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্ত শেষে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
[৫] বিষয়টি কুমিল্লার জজকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা নিশ্চিত করেছেন।
[৬] আসামিরা হলেন, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই (নিরস্ত্র) (৩৫) সাইফুল ইসলাম, এএসআই কৃষ্ণ সরকার (৩৫), এসআই জীবন কৃষ্ণ মজুমদার (৩২), এসআই কামাল হোসেন (৩৫), এএসআই মতিউর রহমান (৩৮) এবং পুলিশ সদস্য নুরুজ্জামান (৩০) ও জামাল হোসেন (৩৫)। এই মামলায় আরও ৮/১০ জন পুলিশ সদস্যকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
[৭] মামলার বাদী সালমা আক্তার জানান, গত মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় ভাই লোকমান হোসেনের খোঁজে ব্রাহ্মণপাড়া থানার এসআই সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে একদল পুলিশ সদস্য তাদের বসতবাড়িতে আসেন। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা সবাই ব্রাহ্মণপাড়া থানার পুলিশ সদস্য হিসেবে দাবি করলে ভাই ও ছেলে পুলিশ সদস্য হওয়ায় সেই সুবাদে দরজা খুলে তারা ঘরে প্রবেশ করেন।
[৮] তিনি জানান, ঘরে প্রবেশ করেই পুলিশ সদস্য সাইফুল ইসলাম, কৃষ্ণ সরকার, নুরুজ্জামান ও জামাল হোসেন বিভিন্ন রুম তল্লাশি শুরু করেন। কোন মামলায় ওয়ারেন্টের আদেশ আছে কিনা জানতে চাইলে কৃষ্ণ সরকার গালাগাল করে লাঠি দিয়ে শোকেসের গ্লাস ভেঙে ফেলে। আলমারির চাবি নিয়ে তল্লাশির নামে ড্রয়ারে থাকা ব্যবসার জন্য রক্ষিত নগদ দুই লাখ টাকা এবং দুই জোড়া কানের দুল, দুইটি চেইন ও তিনটি আংটিসহ ৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
[৯] সালমা আক্তার বলেন, তিনি চিৎকার করলে পাশের বাড়িতে থাকা বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান ও স্বামী আবুল কালাম আজাদ এগিয়ে পার্শ্ববর্তী সাক্ষী বিল্লাল খানের দোকানের সামনে আসেন। তখন পুলিশ সদস্যরা স্বামী নির্দোষ আবুল কালাম আজাদকে দোকানের সামনে থেকে টেনেহিঁচড়ে আটকের চেষ্টা করলে বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান পরিচয় দিয়ে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের আপত্তি জানান। এসময় এএসআই কৃষ্ণ সরকার তার বাবার মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করে। আঘাতের ফলে মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান রক্তাক্ত জখম হয়।
[১০] এছাড়া পুলিশের অন্য সদস্যরা তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা জামাল আহাম্মদ খান ও স্বামী আবুল কালাম আজাদকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। উপস্থিত লোকজন চিৎকার করলে গুলির হুমকি দিয়ে পুলিশ সদস্যরা তার স্বামীকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশের হামলায় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
[১১] মামলার এজাহারের বাইরে তিনি আরও জানান, নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট এবং বিনা অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও স্বামীকে মারধরের ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্যের সঙ্গে স্থানীয় একটি চক্র জড়িত রয়েছে বলে সালমা আক্তারের অভিযোগ। তাদের মধ্যে চান্দলা হাইস্কুল কমিটির সভাপতি বিল্লাল, একই এলাকার ফজলুল হকের ছেলে ডাক্তার বিল্লাল, চান্দলা বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কনু মেম্বার ও স্থানীয় মোস্তফা মেম্বার রয়েছেন।
[১২] অভিযোগের বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, সালমা আক্তারের ভাই লোকমান হোসেন ডাকাতিসহ ৯টি মামলার আসামি। পলাতক থাকায় পুলিশ সাদা পোশাকে আসামি লোকমান হোসেনকে গ্রেপ্তারের জন্য সালমা আক্তারের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। ওই সময় সালমা আক্তার, তার স্বামী আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় কিছু ব্যক্তি পুলিশের উপর চড়াও হয়। তখন পুলিশ সদস্যরা তার স্বামী আবুল কালাম আজাদকে আটক করে এমনকি পরবর্তীতে কুমিল্লা থেকে অভিযান চালিয়ে ৯ মামলার আসামি লোকমান হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
[১৩] অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। অভিযোগটি আমরা তদন্ত করে দেখবো।