মাসুদ আলম : [২] বনানী থানার পৃথক মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনি ও প্রযোজক রাজসহ চারজনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকার তথ্য বেরিয়ে আসছে। বৃহস্পতিবার তাদের ৪ দিনের রিমান্ড নেয় পুলিশ। পরে মামলা দুটি ডিবি হস্তান্তর করা হয়।
[৩] তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, ‘বিশেষ সঙ্গ’ ও বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। তার এই কাজে সহযোগিতা করতো কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। রাজই প্রথমে পরীমণিকে কোটিপতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচয় করিয়ে দেন। রাজের সঙ্গে মিশু হাসান ও জিসান মিলে ১০ থেকে ১২ জন তরুণী নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এ চক্রে মডেল পিয়াসা ও মৌও রয়েছে। তাদের কাজই ছিল উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ‘বিশেষ সঙ্গ’ দেওয়া। এর বিনিময়ে তারা অর্থ আয় করতেন। এই চক্রের তরুণীদের মধ্যে পরীমনির ‘চাহিদা’ ছিল সবচেয়ে বেশি। রাজের মাধ্যেমে বিদেশেও ‘প্লেজার ট্রিপ’ দিতেন পরীমনি। বুধবার রাতে বিপুল পরিমান মদসহ তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন নজরদারীতে রয়েছে।
[৪] র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমনির বাসায় একটা মিনি বার রয়েছে। তিনি বাসায় মাঝে মধ্যেই পার্টির আয়োজন করতেন। এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিরা আসতেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করতেন নজরুল ইসলাম রাজ। সবধরনের মাদক সরবরাহ করতেন রাজসহ অনেকেই।
[৫] তিনি আরও বলেন, পরীমনি ২০১৪ সালে শোবিজ মিডিয়ায় যুক্ত হন। গত সাত বছরে তিনি ৩০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের চেয়ে নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেওয়ার নেশা ছিল তার। এছাড়া ২০১৬ সাল থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি।
[৬] তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীমনির ব্যবহৃত গাড়িটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা কিনে দিয়েছিলেন। করোনার মধ্যেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে দুবাই ভ্রমণে যান তিনি। তার ফোনে ভিআইপি ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও বিশেষ সম্পর্ক থাকার অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। তাদের ব্ল্যাকমেইল করেই কোটিপতি পরীমনি।
[৭] রাজ সিনেমা ও মডেলিংয়ে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতেন। প্রথমে ফাঁদ পেতে তার নিজের বাসায় ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া’য় নিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করাতেন। এভাবে প্রায় দুই শতাধিক তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছেন তিনি। এসব তরুণীর বেশিরভাগের বয়স ছিল ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। তার কম্পিউটার ও মোবাইলে মিলেছে অনেক অনৈতিক গোপন ভিডিও-ছবি। এছাড়াও জব্দ করা হয়েছে তিনটি মেমরি কার্ড। রাজের অফিসের একটি রুম পাওয়া যায়। যেখানে একাধিক নারী পুরুষের একসঙ্গে সমন্বিত বিকৃত যৌনাচারে ব্যবহার্য সরঞ্জামাদি ছিল। এটি রাজের ‘রাজ মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন হাউজের’ একটি কক্ষ বা বিশেষ বিছানা।
[৮] বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা বলেন, বৃহস্পতিবার র্যাব যে তিনটি মামলা করেছে, তার মধ্যে পর্নগ্রাফি আইনে করা মামলা ছাড়া দুটি মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশ পেয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের আদালত থেকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্পাদনা: মিনহাজুল আবেদীন।