শিরোনাম
◈ বিমানবন্দরে জাপানি অপারেটর অনিশ্চিত, চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী হাতে টার্মিনাল দেওয়ার প্রস্তুতি ◈ সময় থাকতে ইসরায়েলের বিপজ্জনক প্রবণতা রুখে দিন: আরবদের প্রতি বিশ্লেষকের সতর্কবার্তা ◈ ফেব্রুয়া‌রির নির্বাচনে সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে নানা আলোচনা যে কারণে ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম‌্যা‌চে ম্যানচেস্টার সি‌টি‌কে হারা‌লো  অ্যাস্টন ভিলা ◈ বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হ‌চ্ছে আজ সন্ধ‌্যায়  ◈ সোমবার বিকা‌লে থাইল্যান্ডের মু‌খোমু‌খি হ‌বে  বাংলাদেশ নারী দল ◈ অবশেষে বেনাপোল-পেট্রাপোল বাণিজ্য স্বাভাবিক, ট্রাক চলাচলে নতুন সময়সীমা নির্ধারণ ◈ মূলধন ঘাটতির দুঃস্বপ্নে ব্যাংক খাত, আমানতকারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে ◈ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আবেগ নয়, সাংবিধানিক পথে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান সালাহউদ্দিন আহমদের ◈ যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখায় একমত, টিকটক ও বিরল খনিজ রপ্তানিতেও সমঝোতা

প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট, ২০২১, ১১:২৬ রাত
আপডেট : ০৫ আগস্ট, ২০২১, ১১:২৬ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রহমতুল্লাহ রাজন: স্মরণে জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল

রহমতুল্লাহ রাজন: বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল। মাত্র ২৬ বছরের জীবনসীমায় দেশ ও সমাজের জন্য যা করে গেছেন তা নিছক কর্ম নয় বরং সেটি তরুণদের উজ্জীবিত হওয়ার মূলমন্ত্রও বটে। ক্ষণজন্মা এই মহীয়ান পুরুষের আজ ৭২ তম জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের আজকের এই দিনে গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে শুভ আগমন ঘটে শেখ কামালের। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ২য় ছিলেন তিনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরেই জন্ম হয়েছিলো শেখ কামালের।


১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি যখন মুক্তি পান, তখন শেখ কামাল অল্প অল্প কথা বলা শিখেছে মাত্র। বাবাকে সেভাবে দেখেনি এবং চিনতেও পারে না। এমনি এক সময় বড় বোন শেখ হাসিনাকে হঠাৎ কানে কানে ফিসফিস করে বলল, হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা ডাকি।


পিতা শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৪৯ সালের ১৪ই অক্টোবর যখন গ্রেফতার হন, শেখ কামাল তখন ২ মাস ১০ দিন বয়সের ছোট্ট শিশু। ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি যখন মুক্তি পান, তখন শেখ কামাল অল্প অল্প কথা বলা শিখেছে মাত্র। বাবাকে সেভাবে দেখেনি এবং চিনতেও পারে না। এমনি এক সময় বড় বোন শেখ হাসিনাকে হঠাৎ কানে কানে ফিসফিস করে বলল, হাসু আপা, হাসু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা ডাকি। তাঁর শৈশবের ৫/৬টি বছর টুঙ্গিপাড়ায় কাটে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভের পর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে শেখ মুজিব মন্ত্রী হন, এর পরপরই তিনি স্বপরিবারে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।

শেখ কামাল ১১২-সেগুনবাগিচায় অবস্থিত ডন্স কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ১৯৫৬ সালে কেজি-১ শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে বিএএফ শাহীন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ছাত্রাবস্থায় তিনি শাহীন স্কুলের তিতুমীর হাউজ-এর ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিলেন। শেখ মুজিব জেলের বাইরে থাকলে তিনি নিজেই শেখ কামালকে স্কুলে দিয়ে আসতেন। অন্যথায় কামাল স্কুটারে করে নিজেই স্কুলে চলে যেতেন। তিনি এই স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাশ করেন এবং পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালে শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্নাতক ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে তিনি স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ১৪ই আগস্ট অর্থাৎ তার শাহাদাত বরণের একদিন আগে স্নাতকোত্তর মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালের ২৯শে জানুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে তিনি ২য় শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য শেখ কামাল ইছামতি নদী পাড়ি দিয়ে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দেবহাটা-হাসনাবাদ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পৌঁছান। মুক্তিযুদ্ধ প্রলম্বিত হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিফৌজকে সংগঠিত করে মুক্তিবাহিনী গঠন করে এবং এ বাহিনীকে বর্ধিত করে। মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টর থেকে অত্যন্ত চৌকস এবং মেধাবী তরুণ, যুবক ও পেশাজীবীদের মধ্য থেকে ৬১ জনকে জেন্টলম্যান ক্যাডেট (জিসিএস) হিসেবে নির্বাচিত করে ভারতের অফিসার ট্রেনিং উইংয়ে (ওটিডব্লিউ) ন্যস্ত করে দেরাদুনে হিমালয় পর্বতের সন্নিকটে মূর্তি ক্যাম্পে প্রেরণ করে।

শেখ কামাল ছিলেন সেই ৬১ জন সৌভাগ্যবান তরুণদের একজন, যারা ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট ওয়ার কোর্স’ সমাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর সকল মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ২ বছরের সিনিয়রিটি দেয়ার কারণে শেখ কামালকেও ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। কিছুদিন সেনাবাহিনীতে চাকুরি করার পর তিনি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে লেখাপড়া শুরু করেন।

শেখ কামাল ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তার স্বল্প সময়ের জীবন যদি আমরা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব, খুব ছোটবেলা থেকেই সব ধরনের খেলাধুলায় প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল তার। এরমধ্যে ক্রিকেটটা তাকে টানত সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার ছিলেন। অবিভক্ত পাকিস্তানের অন্যতম উদীয়মান পেসার ছিলেন, কিন্তু বাঙালি হবার কারণে এবং মুজিবের পুত্র হবার অপরাধে অন্যান্য বাঙালি খেলোয়াড়দের মতো তিনিও অবহেলিত, উপেক্ষিত হয়েছেন নিদারুণভাবে। আজাদ বয়েজ ক্লাব এর হয়ে তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন দীর্ঘদিন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বাসিন্দা শেখ কামাল বাস্কেট বল টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন।

একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও তিনি অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি প্রথমে আবাহনী সমাজ-কল্যাণ সংস্থা গড়ে তোলেন, পরে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ১৯৭২ সালে ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্র’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জার্মানির মিউনিখে ‘সামার অলিম্পিক’ দেখতে যান। ১৯৭৩ সালে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত ১০ম বিশ্ব যুব সম্মেলনে যোগদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ থেকে ৭৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়েছিলেন।

ফুটবল, ক্রিকেট, হকি এই খেলাগুলোকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন কামাল। স্বপ্ন দেখতেন একদিন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া অঙ্গনে এক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। সেই লক্ষ্যে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন সবক্ষেত্রেই, উপমহাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মত আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে দিয়েছিলেন সব খেলার খোলনলচে। দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্রিকেটারদের খুঁজে বের করে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে তৈরি করছিলেন নতুন দিনের জন্য, আপাত লক্ষ্য আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। স্বপ্ন কিন্তু এখানেই শেষ নয়, দৃষ্টি সীমা ছাড়িয়ে সেটা বহুদূরে বিস্তৃত ছিলো তার।

আর ফুটবলে তো রীতিমত বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন শেখ কামাল। দূরদর্শিতা আর আধুনিকতার অপূর্ব সমন্বয়ে রীতিমত তোলপাড় সৃষ্টি করলেন তিনি গোটা উপমহাদেশে। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দুরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশি কোচ ছিলোনা।

আর তাইতো ১৯৭৪ সালে আবাহনী যখন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘আই এফ এ’ শীল্ড টুর্নামেন্ট খেলতে যায়, তখন আবাহনীর বিদেশী কোচ আর পশ্চিমা বেশ ভুষা দেখে সেখানকার কর্মকর্তা আর সমর্থকদের চোখ ‘ছানা বড়া’ হয়ে যায়! পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলা আবাহনী ক্রীড়াচক্র দর্শকের অবাক মুগ্ধতা অর্জন করেছিল মাটি কামড়ে ছোট ছোট পাসে সাড়া মাঠ জুড়ে চমৎকার ফুটবল দিয়ে। ভুয়শী প্রশংসা করেছিলেন কমল বসু সহ আকাশবাণীর প্রথিতযশা ধারাভাষ্যকার বৃন্দ। শেখ কামাল বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিলেন পুরো উপমহাদেশের ফুটবলে। হকিতে নতুন দিনের সূচনা করেছিলেন কামাল। খেলোয়াড়দের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি তিনি তাদের জন্য অবসর ভাতা প্রদানেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার জন্য তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট হতে ১০ লাখ টাকার অনুদান নিয়ে ‘খেলোয়াড় কল্যাণ তহবিল’ গঠন করেন।

শুধু ক্রীড়াই নয়, শিল্প সাহিত্যের সব শাখা পুনর্গঠনে তিনি পালন করছিলেন অসামান্য অবদান। পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত হল কর্মপরিধি। ছায়ানটের সেতারবাদন বিভাগের মেধাবী ছাত্র শেখ কামাল প্রতিষ্ঠা করলেন ঢাকা থিয়েটার। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ যখন ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক, তখন ‘নাট্যচক্র’ নামে একটি নাটকের সংগঠন গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই নাট্য সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন শেখ কামাল। এই নাট্য সংগঠনের অভিনয়শিল্পী হয়েই নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদারের সঙ্গে কলকাতায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন তিনি। নাটক শেষে ফেরদৌসী মজুমদার ও শেখ কামালের অটোগ্রাফ নিতে সেদিন দর্শকরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল।

এর মাঝে ৬৯ সালে পাকিস্তানি জান্তা সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করল ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে। ’৬৯-এ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা সরকার ধর্মীয় উগ্রতার পরিচয় দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করে। শেখ কামাল তখন রবীন্দ্র সংগীত শিল্পীদের সংগঠিত করেন এবং রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি খ্যাতিমান শিল্পী জাহিদুর রহিমকে দিয়ে বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে গাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। তার প্রতিবাদের ভাষা ছিল রবীন্দ্রসংগীত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই বিশ্বকবির গান গেয়ে অহিংস প্রতিবাদের অসাধারণ উদাহরণ রেখেছেন।

ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও সংগঠক হিসেবে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ’৬৯-এর গণ অভ্যত্থানে শেখ কামালের প্রতিদিনের উপস্থিতি ছিল সবার জন্য তুমুল উৎসাহব্যঞ্জক। এই আন্দোলনে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে মিছিলসহ বটতলায় সমবেত হতেন। জাতির পিতার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো অহমিকাবোধ ছিল না। তিনি ছিলেন বিনয়ী ও মার্জিত। দাম্ভিকতা ছিল তার স্বভাববিরুদ্ধ। পরোপকারী ও বন্ধুবৎসল শেখ কামালের বিনম্র আচরণে মুগ্ধ হতো সবাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ব্যবহৃত টয়োটা-৬৮ মডেলের লাল গাড়ীটাই ছিল শেখ কামালের একমাত্র সৌখিন সম্পত্তি। তার অর্থ-বিত্ত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি কোন আকর্ষণ ছিলনা। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়কের পুত্র হবার পরও শেখ কামালকে কখনো ইন করে শার্ট পড়ে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়নি। তিনি ওপেন ফুলহাতা টি-শার্ট এবং প্যান্ট পরতেন, আর পায়ে সাধারণ স্যান্ডেল বা স্যান্ডেল-স্যু। কোনদিন তাকে স্যুট পরতে দেখা যায়নি। তিনি ছাত্রলীগ করতেন; কিন্তু কোনদিন নেতৃত্বের আসনে বসেননি।

শেখ কামাল প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকীকে পছন্দ করতেন। তবে পারিবারিক উদ্যোগে বিয়েটা হয়েছিল। খুকীর বাবা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী। দু’ পরিবারের সম্মতিতে ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই তারা দু’জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রূপকথার চেয়েও অসম্ভব সুন্দর তাদের ভালোবাসার পরিনয় স্থায়ী হয়েছিল মাত্র একমাস।

এই আগস্টেই তার জন্ম আবার এ মাসেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করে শহীদ হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে তিনি প্রথম শহীদ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ শেখ কামাল রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তার জন্ম ও কর্মময় জীবন আমাদের কাছে অতুলনীয় কারণ সততার কষ্টিপাথরে তিনি ছিলেন অনন্য।


তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমাদের ছাত্ররাজনীতি, জাতীয় রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সূচিত হতো।


শহীদ হবার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। মাত্র ২৬ বছরের অতি ক্ষুদ্র জীবনকে তিনি অসামান্য সব কর্ম দিয়ে সাজিয়েছিলেন, মাতৃভূমির ইতিহাসের অন্যতম সূর্যসন্তান হিসেবে নিজেকে চিনিয়ে গিয়েছিলেন অসম্ভব বিনয় আর সারল্যে। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আমাদের ছাত্ররাজনীতি, জাতীয় রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন সূচিত হতো। ক্ষণজন্মা শেখ কামালের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন, তাঁর আদর্শকে যদি আজকের তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া যেত, তরুণদের অন্তরে যদি গেঁথে দেয়া যেত; তাহলে তরুণদের মধ্যে যে গোষ্ঠীটি আজ পথভ্রষ্ট হয়েছে, বিপথে গেছে বা ভ্রান্ত পথে হাঁটছে, তারা সত্যিই দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতো।

মাত্র ২৬ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে শেখ কামাল যেসব অসামান্য কর্ম দিয়ে প্রিয় এ মাতৃভূমিকে সাজিয়েছেন, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম স্মরণ রাখবে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতায়। শেখ কামালের জন্মদিনে তাঁর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়