কাকন রেজা: বড় ভাবির ফোন। বললেন, বড়ভাই কথা বলবেন। না, বড়ভাই আমার সাথে কথা বলতে তখন পারেননি। ভাবি বললেন, পরে কথা বলবেন, এখন কথা বললে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। যখন বললেন, তখন তার একটাই প্রশ্ন ছিলো, এটা কী হলো? হ্যাঁ, ফাগুন চলে যাবার পরের কথা বলছি। বলছি, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথা, আমাদের বড় ভাইজানের কথা। আমরা দু’ভাই ফোনে তেমন কিছুই বলতে পারিনি সেদিন, সম্ভব ছিলো না। বড়ভাইয়ের গলাও ভেজা, আর আমি তো...।
ফাগুনের এমন হবে, ছেলেটাকে এভাবে চলে যেতে হবে। আততায়ীর হাতে খুন হতে হবে, আমাদের পরিবারের কেউই এমনটা ভাবেনি। অনেকটা বজ্রপাতের মতন আমাদের ওপর নাযিল হয়েছে এ দুঃসহতা। আমাদের সবচেয়ে চুপচাপ ভাইটা, যিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখতে চান অনেকটাই। কম কথা বলেন, মুডি। তালাল ভাই, যিনি রাকি ইউসুফ নামেও পরিচিত কারো কারো কাছে। তিনিও অস্থির হয়ে উঠলেন। রুমি ভাই, ভাবি লাকি, রুনু আপা, বোন রূপা, বুলু আপা, বন্ধুর মতন ভাতিজা দিপু কার কথা বলবো, সবাই অসম্ভব রকম শকড।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সমুখে ফাগুন রেজা হত্যার বিচার দাবিতে মানববন্ধন করবেন ফাগুনের সতীর্থ এবং অন্যান্য সাংবাদিকরা। উদ্যোক্তাদের মধ্যে তানজিল রিমনও ছিলেন। তিনি বললেন, সায়ীদ স্যারকে কি বলবো। তিনি তো কোনো মানববন্ধনে আসেন না। তিনি কি আসবেন? তার প্রশ্নের উত্তরে যোগাযোগ করতে বললাম বড় ভাইজানের বাসার ল্যান্ডফোনে। বললাম, ভাবি ধরতে পারেন, তুমি বলো। রিমন ফোন করার পর ভাইজান জানতে চেয়েছিলেন, কখন, কোথায়।
ভাবির সাথে কথা হলো, বললাম ভাইজান আসবেন। ভাবি বললেন, যাবেন, তুমি ভাই না। কেন যাবে না। যেদিন মানববন্ধন সেদিনও অনেকের মনে আশংকা ছিলো তিনি আসবেন কিনা। আমার অন্য ভাই-বোনরা এসেছেন। এসেছেন অন্যান্য আত্মীয়স্বজন। বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ থেকে এসেছেন সাংবাদিকরা। এসেছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। যাকে নিয়ে অনেকের শংকা ছিলো সেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এসেছেন কিন্তু তাদের অনেকেরই আগে। আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন কাঁধে হাত রেখেছেন, যেন আমি শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারি। বড় ভাইজান সেদিন পাশে থাকায় দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলতে পেরেছিলাম। সব ভাই-বোন আত্মীয়রা পাশে ছিলেন বলেই হয়তো সে অবস্থায় সেদিন অতটুকু বলা সম্ভব হয়েছিলো।
আজ ভাইজান আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন। পুরানো একটা লেখা পোস্ট করেছিলাম সামাজিকমাধ্যমে। কিন্তু মনে হলো এই আলোকিত মানুষটা পরিবারের জন্যও আলোকিত কিনা সেটাও জানানো উচিত। বিশেষ করে কন্ট্রাস্টের এ সময়ে। আগেই বলেছি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ভেতরে-বাইরে একই রকম, একই মানুষ। শুভ জন্মদিন বড় ভাইজান। আরো অনেকদিন আমাদের মধ্যে থাকুন। আমাদের কাঁধে হাত রাখুন, সাহস দিন।
কাকন রেজা : লেখক ও সাংবাদিক