শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২১ জুলাই, ২০২১, ১০:৪৪ দুপুর
আপডেট : ২১ জুলাই, ২০২১, ০৪:৩৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] ভিয়েতনামের মত মার্কিনীদের কাছে আফগানিস্তান এখন ‘ভিয়েতস্তান’

রাশিদুল ইসলাম : [২] আফগান যুুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ হেরে গেছে বলে মনে করেন এই যুদ্ধের কিছু মার্কিন যোদ্ধা। তারা বলছেন, আফগানিস্তানজুড়ে যে রক্তপাত হয়েছে, তা বিফলে গেছে। শত শত যোদ্ধা, সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধে। কিন্তু সেসব মানুষের রক্ত, তাদের জীবন-সবই পরাস্ত হয়েছে। যুদ্ধে হেরে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বেশ কিছু যোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে এমন প্রতিবেদন তৈরি করেছে রয়টার্স।

[৩] মার্কিন স্পেশাল অপারেশন্স ফোর্সেস মেরিন রেইডারের জেসন লিলি (৪১) ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে যুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার দেশের জন্য ভালবাসা প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে রাজনীতিকদের জন্য বিরক্তিকর। অন্যদিয়ে এখানে ওখানে যে রক্ত ও অর্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, তার প্রতি হতাশাজনক অবস্থা। এই যুদ্ধে কমরেডরা নিহত হয়েছেন। যুদ্ধে বিকলাঙ্গ হয়েছেন। আর প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই যুদ্ধ বিজয় সম্ভব নয়। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশ এবং নিজের জীবনকে নিয়ে নতুন করে ভেবেছেন।

[৪] লিলি বলেন, এই যুদ্ধে আমরা শতভাগ হেরে গেছি। পুরো যুদ্ধটা ছিল তালেবান থেকে মুক্ত হওয়া। কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি। তালেবানরা আবার ফিরছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, আফগান জনগণকে অবশ্যই তাদের নিজেদের ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। বিজয় সম্ভব নয় এমন একটি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরো একটি প্রজন্মকে উৎসর্গ করতে পারে না।

[৫] প্রায় ২০ বছর আগে আল কায়েদা যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা চালায়। সেই থেকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে যুক্তরাষ্ট্রের এবং মিত্রবাহিনীর কমপক্ষে ৩৫০০ সেনা সদস্য নিহত হয়েছে। মারা গেছেন কমপক্ষে ৪৭০০০ বেসামরিক আফগান নাগরিক। আরো মারা গেছেন কমপক্ষে ৬৬ হাজার আফগান সেনা সদস্য। কমপক্ষে ২৭ লাখ আফগান নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এসব তথ্য পক্ষপাতহীন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির কস্টস অব ওয়ার প্রকল্পের।

[৬] লিলি বলেন, এর কি মূল্য আছে? এটাই বড় প্রশ্ন। প্রায় ১৬ বছর ধরে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ওয়্যার অন টেররের স্বপক্ষে ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধ করেছেন লিলি। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম সেখানে সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছে শত্রুদের পরাজিত করতে। অর্থনীতি উন্নত করতে এবং পুরো আফগানিস্তানের উন্নতির জন্য। কিন্তু তারা তাতে ফেল করেছে। তার ভাষায়, আমি মনে করি একটি জীবনও উভয় পক্ষের জন্য কোনো মূল্য বয়ে আনেনি।

[৭] যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে যুদ্ধের ফলকে অন্যভাবে দেখেন। যেমন নারী অধিকারের উন্নতি হয়েছে। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলের সদস্যরা পাকিস্তানে আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছে। রয়টার্স/ইপসোসের সাম্প্রতিক জরিপ বলছে প্রতি ১০ জন ডেমোক্রেটের মধ্যে প্রায় তিনজন এবং প্রতি ১০ জন রিপাবলিকানের মধ্যে মাত্র চারজন মনে করেন আফগানিস্তানে সেনাদের থাকা উচিত ছিল। সাবেক মেরিন স্কাউট স্নাইপার জর্ডান লেয়ার্ড (৩৪) ইরাক এবং আফগানিস্তানের যুদ্ধকে তুলনা করে বলেন, এটা ছিল ‘ভিয়েতস্তান’। লেয়ার্ড বলেন, আপনাকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে যে, ভিয়েতনাম যুদ্ধের যোদ্ধাদের বিষয়ে। তারা অঙ্গ হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। লেয়ার্ড দায়িত্ব পালন করেছেন আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশের সাঙ্গিন উপত্যকায়। লেয়ার্ড বলেন, প্রথম তিন মাসের যুদ্ধে তার ইউনিটের ২৫ জন সদস্য নিহত হয়েছে। কমপক্ষে ২০০ আহত হয়েছে। তার হাতের ওপর রক্ত ঝরতে ঝরতে তার বেস্টফ্রেন্ড মারা গেছে।

[৮] লিলি বলেন, আফগানিস্তানে অবস্থানকালে তিনি বুঝতে পেরেছেন কেন ইতিহাসবিদরা আফগানিস্তানকে ‘সাম্রাজ্যের কবরখানা’ বলেন। বিংশ শতাব্দীতে দু’বার আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায় বৃটেন। ১৮৪২ সালে সেখানে তারা সবচেয়ে ভয়াবহ সামরিক পরাজয়ের অন্যতম এক পরাজয় বরণ করে। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানকে দখল করে রেখেছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু ১৫০০০ সেনা সদস্য নিহত এবং হাজার হাজার আহত হওয়ার পরই তারা আফগানিস্তান ছেড়ে যায়। লিলি বলেন, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নিয়মের বিষয়ে তিনি বিশেষত এক বৈকল্যে ভোগেন। উদাহরণ হিসেবে, তাকে এবং অন্য ইউনিটকে রাতের বেলা তালেবানদের আস্তানায় ঘেরাও বা অভিযান চালাতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, বাচ্চাদের চুম্বন করতে দেয়া হতো না আমাদেরকে। সেখানে আমরা কিছুই করতে পারতাম না। আমরা আসলে চেষ্টা করেছি এবং ব্যর্থ হয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়