দীপক চৌধুরী: আমরা নিজেরা দায়িত্বশীল না হয়ে শুধু দোষ দিচ্ছি অপরকে। শুধু ব্যর্থতা তুলে ধরি। ওষুধ নেই, আইসিইউ নেই, ডাক্তার নেই, হাসপাতালে সিট খালি নেই। অর্থাৎ দোষারুপ। কিন্তু যারা শুধু অভিযোগ দিতে জানেন- তারা কী একটি বারের জন্যও বাস্তবতার সঙ্গে বিবেককে প্রশ্ন করেছেন। আমি কী আমার নিজের দায়িত্বটুকু পালন করছি?
করোনার মৃত্যুর খবর আর ভয়ংকর সংক্রমণের সংবাদ আমাদের কাছে দীর্ঘ দিন ধরেই । শুধু ‘লকডাউন’ দিয়েও চলা সম্ভব নয়। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার দায়িত্ব তো আমাদের। উদ্বেগের সেইসব খবর অনেকে যেন কানেই তুলতে চান না। এই যে গণমাধ্যমগুলোতে বার বার, প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে করোনার ভয়াবহতা জানানো হচ্ছে, সতর্ক করা হচ্ছে মানুষকে কিন্তু কেনো যেনো অনেকে এটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। এ ফাঁকি কাকে, মৃত্যুর সঙ্গে ফাঁকি কেন দেওয়া হচ্ছে এর ব্যাখ্যা নেই। এখন আমাদের উপায়? করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ঈদ উদযাপনে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। সড়ক, নৌ ও ট্রেনে সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড়। বরাবরের মতোই লঞ্চ ও ফেরিঘাটগুলোতেও যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখছি। তিল ধারণের জায়গা নেই। এর সঙ্গে সদরঘাটে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাচ্ছি যাত্রীদের। লঞ্চ- ফেরি-স্পিডবোটে গাদাগাদি করেই নদী পাড়ি দিচ্ছেন দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। লঞ্চেও মানা হচ্ছে না অর্ধেক যাত্রী নেয়ার বিধিনিষেধ। আছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাও করছেন না অনেকে। এ অবস্থা শুধু ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, বাসস্টেশনে নয়।
হাটে-মাঠে সর্বত্র এ অবহেলা। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় গাবতলী গরুর হাটের একটি হাসিল ঘরকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা জরিমানা। স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করায় হাট কর্তৃপক্ষকে এই জারিমানা। কিন্তু শুধু কী এক-দুটি ঘটনা। স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের দৃশ্য দেখছি অহরহ, সর্বত্র, ফ্রি-স্টাইল। যেনো আমাদের আর কিছুই করার নেই। প্রশ্ন উঠছে, কেনো কঠোরভাবে আইনপ্রয়োগ করা হচ্ছে না। এতো মানবাবিকতা দেখানোর সময় কী এখন? প্রয়োজনে কঠোরতা দরকার। আজ দেখছি খালেদা জিয়াও টিকা নিচ্ছেন। এখন নিচ্ছেন, আগে নেননি তিনি। কিন্তু কেন? নাকি রাজনীতি? তাঁর কী কোনো দায়িত্ব ছিল না? তিনি রাজনীতি করেন কার জন্য! তিনিও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আগে তো দেশ, দেশের মানুষ, পরে রাজনীতি। সবকিছু দেখে, শুধুই আফসোস করতে হয়, আর কী ই-বা করার আছে! আমাদের মেধা ও শ্রমের যুগপৎ সম্মিলনে আমরা আজকের এ অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এখন নিজেদের সভ্য ও আধুনিক মানুষ হিসেবে দাবি করি কিন্তু এখানে আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক জটিল, কঠিন ও দুর্গম পথ। তিলে তিলে গড়ে ওঠা এ সভ্যতার পেছনে নানান গুনীজনের সদিচ্ছা ও সর্বাত্বক চেষ্টা ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কঠিন ও জটিল স্তর থেকে বাংলাদেশকে সুন্দরের পথে এনেছেন।
এখন যতো রকম মায়াকান্নাই হোক না কেনো এতে কান দেওয়া ঠিক হবে না। আমাদের গুনীজনের যে চিন্তা ও আদর্শ তার বিপরীত অবস্থান জামায়াতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ইসলামী দলের। বিএনপি নামের দলটির পুঁজি কেবল ওরা। ধর্মপ্রাণ মানুষকে কীভাবে যেন হেফাজত বিভ্রান্ত করে শেখ হাসিনার আধুনিক ও প্রগতিশীল সরকারের মুখোমুখি করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাঁর সরকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক, দূরদর্শী ও সর্বত্যাগী বলেই আমরা হেফাজতি চক্রান্ত থেকে রক্ষা পেয়েছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে কঠিন, ইস্পাতের মতো ধারালো ও কৌশলী হতে জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাকালে তাঁর সকল চেষ্টা এদেশের সকল শ্রেণির মানুষের মঙ্গলের জন্য।
লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক