শিরোনাম
◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল ◈ বেনজীর আহমেদের চ্যালেঞ্জ: কেউ দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দেবো (ভিডিও) ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী 

প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২১, ০২:০৬ দুপুর
আপডেট : ১৮ জুলাই, ২০২১, ০২:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শেখ মেহেদী হাসান: "সি আর বি’র সোনার দেহত হাত লাগাইতু ন দিয়ুম"

জেগেছে প্রিয় শহর বিপ্লবী চট্টলা। চট্টগ্রাম শহরের অতি প্রাচীনতম স্থাপনার অন্যতম সি.আর.বি বা সেন্ট্রাল রেলওয়ে ভবন।১৮৯২ সালে বৃটিশ সরকার পূর্ববঙ্গে রেলওয়ে প্রবর্তন করে। আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যই কেন্দ্রীয় রেল ভবন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামে।১৮৯৯ইং সালে সি.আর.বি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

সি.আর.বি লাগোয়া উত্তর টিলায় লোজ্জ ক্লান, দুপাহাড়ের মাঝখানে গভীর খাদ, যার শেষ প্রান্তে বেরিয়েছে পশ্চিম প্রান্তের মূল রাস্তায় পেট্রোল পাম্পের পাশ দিয়ে যেখানে উঁচু বাঁধ দিয়ে তৈরি করা যাবে শত ফুট গভীরতার স্বচ্ছ সরোবর। চট্টগ্রামের সিআরবির সাত রাস্তার মোড় ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে নির্মাণ করা হয়েছে শিরীষতলা সহ বেশ কিছু নান্দনিক স্থাপনা। শিরীষতলায় বসে জমিয়ে আড্ডা দেয়া যায়, মাঠে খেলা যায়। আছে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম স্মৃতিফলক, ১৮৯৯ সালের তৈরি বাষ্পীয় রেল ইঞ্জিনের মডেল।

সি.আর.বির পূর্ব দিকে রাস্তার পূর্ব পার্শ্বে রেলওয়ে হাসপাতাল অবস্থিত। এটা একসময় ছিল ফিরিঙ্গি অফিসারদের ক্লাব। সি.আর.বি পাহাড়ি জনপদের আশপাশ ও পাহাড়ের তলদেশে বাঙালির সর্ববৃহৎ বৈশাখী উৎসব, বসন্ত উৎসব ও ঐতিহ্যবাহী সাহাবুদ্দিনের বলীখেলায় লক্ষাধিক লোকের জমায়েত ঘটে। বলা যেতে পারে বর্তমান সময়ে চট্টগ্রামে সাহিত্য সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র এই সি.আর.বি।

মানুষের যেমন ফুসফুস থাকে তেমনি থাকে নগরের। সি আর বি হচ্ছে চট্টগ্রামের মানুষের মুক্ত বাতাস ও সবুজ আঙ্গিনায় প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়ার অন্যতম স্থান! ঐতিহাসিক কারণে এজাতীয় স্থানগুলো সবই বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন। এতে একটা লাভ হয়েছে যে লোভী মানুষরা চট্টগ্রাম কে এখনো দখল করে ফেলতে পারেনি। এখনো চট্টগ্রামের টিলাময় অপরূপ ভূপ্রকৃতি কোনরকমে টিকে আছে। যদিও উন্নয়নের অত্যাচার উড়ালসেতুতে ঢাকা পড়েছে প্রিয় চট্টগ্রাম। এরইমধ্যে দেশের নদীখেকো, পাহাড়খেকো, সবুজখেকো কুমির গ্রুপগুলোর একটি 'ইউনাইটেড গ্রুপ' রেলওয়ের সাথে যোগসাজশে নগরীর মধ্যস্থলে অবস্থিত অপরূপ প্রকৃতির এই সবুজ অঙ্গনটিকে নিজেদের উদরে ঢুকিয়ে ফেলতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে!

চট্টগ্রামে হাসপাতালের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কত কম সেটা সাম্প্রতিক কভিড আক্রমণে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে! আমরা দেখেছি এস আলমের মত আরেকটি কুমির গ্রুপকে ৩০০০ কোটি টাকা কর মওকুফ করা হয়েছে! তারা বড়জোর ১০০ কোটি টাকা দান করে বানিয়েছে অসংখ্য মাদ্রাসা এবং মসজিদ! কিন্তু বানায়নি একটিও হাসপাতাল! সাতকানিয়ার এক পীরের মুরিদ হচ্ছে এই গ্রুপের মালিক ভ্রাতাগণ! তাদেরই বড়জন করোনায় মারা গেছেন ভেন্টিলেশনের অভাবে! প্রশ্ন হল ইউনাইটেড যে হাসপাতাল বানাবে সেটা আদৌ চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসবে কিনা? কে না জানে প্রাইভেট হাসপাতাল এখন সবচেয়ে বড় ব্যবসার নাম! মূলত রোগীদের নিঃস্ব করে দেয়াই এদের লক্ষ! ফলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ধারণ ক্ষমতার অন্তত ১০ গুণ রোগী থাকে! মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ কখনোই ইউনাইটেড এ যাবে না।

যদিও এই কুপরিকল্পনার পেছনে কোন কোন আমলা আছে কিন্তু আমার জানামতে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সি আর বি রক্ষায় জনমত গঠনে ফেসবুক গ্রুপ খুলেছেন। তবে লক্ষনীয়ভাবে এই আন্দোলনে অনুপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নেতারা। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতীক্রম দু'একটি বাম দল। বস্তুত এই আন্দোলনের সূচনাই করেছে বামরা। এইধরনের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলনে কখনোই দেখা যায় না কাদের, বলেন তো? ঠিক ধরেছেন! মোল্লা আর মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দেখবেন গাজার সীমান্তে কোন ইসরায়েলি যদি গাঁজা খেয়ে ধোঁয়া নিক্ষেপও করে তারা কিভাবে জানি এখানে বসেই গন্ধ পেয়ে যায়! গজারি লাঠি নিয়ে বিশাল মিছিল বের করে!

২০০০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ছিলাম। তখন সি আর বি যেতাম, তবে কম। কারণ সেখানে ছিনতাইকারীদের আড্ডা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় চট্টগ্রামে আমার প্রিয় স্পট ছিল বাটালি হিল। আমি আর আমার প্রিয় বন্ধু ও ভাই প্রয়াত ইমনসহ গিয়ে বসে থাকতাম ঐ টিলার চূড়ায়। জিলাপির প্যাঁচের মত বলে ইমন এর নাম দিয়েছিল জিলাপি পাহাড়। তবে সেসময় আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিল চট্টগ্রামে আরেকটি বিখ্যাত স্পট ফয়'স লেক। মাঝে মাঝেই চলে যেতাম সেই অদ্ভূত সুন্দর সবুজ অরণ্যানীতে যার বুক চিরে ফয় সাহেব বানিয়েছিলেন টলটলে জলের এক আশ্চর্য সুন্দর কৃত্রিম হ্রদ। ২০০২-২০০৩ এর দিকে এই লেকটি পর্যটন কর্পোরেশন কে দেয়া হয় ব্যবস্থাপনার জন্য। কিন্তু তৎকালীন মন্ত্রী ও বড় সাহেবদের ইচ্ছায় বাৎসরিক মাত্র ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে রেলওয়ে পর্যটন ও কনকর্ড এরমধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ৩৩৬ একর ফয়েজ লেক তুলে দেয়া হয় কনকর্ড নামক আরেকটি কুমিরের হাতে। ফলে চট্টগ্রামের আমজনতা ফয়'স লেক এ প্রবেশ করার অধিকার হারায়। কারণ লেকে প্রবেশ করতে শুধুমাত্র প্রবেশ মূল্য হিসেবে ৩০০ টাকা নেয় কনকর্ড! প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময় চট্টগ্রামের ৫০ লক্ষ মানুষের সবুজে নিঃশ্বাস নেয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া যায়? সি আর বি র চেয়ে শত গুন বড় ফয়েজ লেক।এই লেকের অধিকার নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ নিরব কেন সেটা বোধগম্য নয়।

ঢাকায় রমনা ছাড়া আর তেমন জায়গা নেই যেখানে ঢাকার মানুষ নিঃশ্বাস নিতে পারে। সেই রমনাও সম্প্রতি দখলবাজদের নজরে পড়েছে। অন্য দিকে ঢাকার ৮০% মানুষের পক্ষে রমনায় যাওয়াই সম্ভব নয়। ঢাকা পৃথিবীর সর্বাধিক দূষিত নগরীর অন্যতম! কোথাও নেই এতটুকু সবুজ! এখানকার রোবটিক নির্বোধ মানুষেরা এসি কক্ষে ঘুমিয়ে আর এসি গাড়িতে চড়েই খুশী!

চট্টগ্রাম আমার প্রিয়তমা। তার সান্নিধ্যে থাকতে পারিনা, থাকতে হয় নিকৃষ্টতম নগরী ঢাকায়! তবু চাই চট্টগ্রামের মানুষেরা ভালো থাকুক। তাদের ফুসফুসের মধ্যে দখলের ভাইরাস যেন প্রবেশ না করতে পারে। প্রিয় চট্টলা, বিপ্লবের সূতিকাগার, মাসটারদা-প্রীতিলতার চট্টলা জেগে ওঠো! নিজের অধিকার নিজে বুঝে নাও। দেখি না কি হয় চিন্তা বাদ দিয়ে যারযার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করুন।
হাসপাতালের জন্য পরিত্যক্ত হাজি ক্যাম্পসহ অন্তত ১০০ জায়গা আছে৷
সি আর বি র চৌহদ্দির মধ্যে হাসপাতাল চাই না!
"সি আর বি র সোনার দেহত হাত লাগাইতু ন দিয়ুম"

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়