জাহিদ কবির: [২] যশোর বাঘারপাড়ার চতুরবাড়িয়ার ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকের পরিচালক জাহিদ ও রতন আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিয়েছে। গ্রহকদের লাভের টাকা মূল টাকায় যোগ ও অধিক লাভ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বিভিন্ন সময় টাকা তুলে নিয়েছে।
[৩] এ পর্যন্ত ৩৪ জন গ্রাহকের ৫৯ লাখ ৫ হাজার ৮শ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। এ কাজে সহযোগিতা করেছে রতনসহ আরও একজন বলে জানিয়েছে জাহিদ। শনিবার এ জবানবন্দি গ্রহণ শেষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামুনুর রহমান আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। আসামিরা হলো হালদা গ্রামের মৃত জিন্দার আলী মোল্লার ছেলে এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালক আনোয়ার জাহিদ, মাগুরা শালিখার ছয়ঘরিয়া গ্রামের আবু বাক্কার কাজীর ছেলে মুশফিকুর রহমান রতন।
[৪] এ দিন বিচারক দুইজন গ্রাহকের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন সাক্ষী হিসেবে। তারা জানিয়েছেন ব্যাংকের পরিচালক আনোয়ার জাহিদ ব্যাংকে জমা রাখা টাকার লভ্যাংশ মূল টাকার সাথে যোগ করার কথা বলে প্রতি মাসে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তাদের সমুদয় টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে।
[৫] আনোয়ার জাহিদ জানিয়েছেন, চার বছর আগে তিনি এশিয়া ব্যাংকের চতুরবাড়িয়ার এজেন্ট ব্যাংকের পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তার স্থানীয় বেতালপাড়া বাজারে সার-কীটনাশক ও স্ত্রীর ব্যবসা আছে। তিনি বাঘারপাড়া, শালিখা ও কালীগঞ্জ এলকার প্রায় দেড় হাজার লোককে এ ব্যাংকের গ্রহণ করেন। তারা নিয়মিত টাকা জমা রাখতেন। মাঝে তার ব্যবসায় অনেক টাকা লোকসান হয়। খরিদ্দারদের কাছে টাকা পাওনা থাকায় ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে পারেনি তিনি। এরপর তিনি স্থানীয় একজনের সাথে পরমর্শ করে গ্রহকদের অধিক টাকা মুনাফা দেয়ার আশ্বস দিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে টাকা উঠিয়ে নেন। এরপর তিনি ব্যাংকের হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হয়ে পূর্ব পরিচিত রতনের সহযোগিতা চেয়ে ছিলেন। তিনি হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
[৬] অপরিচিত ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার দুইদিন পর ব্যাংক থেকে মেইল পেয়ে তিনি আবার দেশে ফিরে আসলে পুলিশ তাকে আটক করে বলে জানিয়েছেন জবানবন্দিতে।
[৭] মুশফিকুর রহমান রতন জানিয়েছেন, তিনি ইনসুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে জাহিদের সাথে তার পরিচয়। ব্যাংকের হিসাব মিলাতে ব্যর্থ হয়ে জাহিদ একদিন তাকে ডেকে হিসাব মিলিয়ে দিতে বলেছিলেন। অনেক টাকার হিসাব হওয়ায় মিল করা সম্ভাব নয় বলে তিনি তাকে জানিয়ে ছিলেন। অবশেষে জাহিদ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে তার পূর্বপরিচিত যশোর সদরের তেজরোল গ্রামের একজনের সাথে যোগাযোগ করতে বলি। সে তাকে ভারতে পাঠিয়ে দিতে পারবে। জাহিদ তার কাছে ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সে ভারতে পৌঁছানোর তার কাছে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য। এ টাকা সে পাঠাতে পারেনি। পরে পুলিশ তাকে আটক করলে এ পুলিশকে দিয়েদিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
[৮] মামলার অভিযোগে জানা যায়, আসামি আনোয়ার জাহিদ ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বাঘারপাড়ার চতুরবাড়িয়ায় এজেন্ট ব্যাংকিং (চতুরবাড়িয়া এজেন্ট আউটলেট) কার্যক্রম পরিচালানার অনুমতি পান। এরপর থেকে তিনি চতুরবাড়িয়া বাজার ও আশপাশ এলাকার ১ হাজার ৪শ’৭৮ জন গ্রাহকের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছিলেন। গত ২০ জুন থেকে আসামি আনোয়ার জাহিদকে কোথাও খুঁজে না পাওয়ায় নাজির আহমেদ, আইয়ুব হোসেন ও তাসলিমা খাতুনসহ ৩৪ জন গ্রাহক ব্যাংকের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। গ্রাহকদের আনোয়ার জাহিদসহ অন্য আসামিরা চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুন দুপুর পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে ৪১ লাখ ৬শ টাকা নিয়েছেন।
[৯] আসামির এ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের কর্মকর্তারা সরেজমিনে বিষয়টি অনুসন্ধান করেন। তদন্তে আসামিরা পরষ্পর যোগসাজসে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মঙ্গলবার ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের রিলেশনশিপ অফিসার লিকো আহম্মেদ এ মামলা করেন। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান ডিবি পুলিশের এসআই আরিফুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব পান।
[১০] মামলার তদন্তকালে গোপন সূত্রে সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে বাঘারপাড়ার খাজুরা, বেনাপোল, চৌগাছা, কোটচাঁদপুর ও ঝিনাইদহ, অভিযান চালিয়ে ওই ৭ জনকে আটক করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বুধবার আনোয়ার জাহিদ ও মুশফিকুর রহমান রতনের রিমান্ড শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শনিবার আসামিদের রিমান্ড শেষে আদালতে সোপর্দ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদিন আসামিরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ওই জবানবন্দি দিয়েছেন।