বাশার নূরু: [২] সন্তান হত্যার অভিযোগে মঙ্গলবার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির ভার্চুয়ালি আপিল শুনানিকালে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ মন্তব্য করেন।
[৩] প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ভারতের চেয়ে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি (ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন) কোনো অংশেই খারাপ না। ২০১৯ সালে ভারতে ১২১ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আর আমাদের এখানে মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ৩২৭ জনের। আমাদের এখানে স্ত্রী হত্যায় (ওয়াইফ কিলিং) স্বামীর ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হচ্ছে। কিন্তু ফাঁসি বা যাবজ্জীবনের এই সাজায় কী স্ত্রী হত্যা (ওয়াইফ কিলিং) কমেছে? কমেনি। সুতরাং এটা ভুল ধারণা যে সাজা দিলেই সমাজ দুধের সাগরে ভাসবে, আমরা অপরাধ মুক্ত হয়ে যাব।
[৪] শাশুড়ির সঙ্গে রাগ করে বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় নিজ সন্তানকে হত্যা করে বাবা। এ ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন স্ত্রী। মামলায় স্বামী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। পরে বিচারিক আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। যা পরবর্তীতে হাইকোর্টেও বহাল রাখেন।
[৫] প্রধান বিচারপতি একটি মামলার নজির তুলে ধরে বলেন, এক লোক সকাল বেলা একটি চায়ের দোকানে গেল। দোকানে গিয়ে দেখে একজন চা খাচ্ছেন তখন তাকে ধরে মাটিতে শুইয়ে গলা কেটে পৃথক করে ফেললো, পরে মাথাটা লটকিয়ে নিয়ে (অপরাধী) থানায় নিয়ে হাজির হয়েছে। এ ঘটনায় আদালত তাকে ফাঁসি দিয়েছিলো। তখন সুপ্রিম কোর্ট বললো, এ অপরাধের ক্ষেত্রে ফাঁসির সাজা কমানো যায় না।
[৬] এসময় সন্তান হত্যা মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতকে বলেন, এই মামলার ক্ষেত্রে ঘটনাটি ছিল আকস্মিক। শাশুড়ির অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ হারান ওই বাবা। সে সময় তিনি নিজেকেও হত্যা করতে পারতেন। কিংবা শাশুড়িকে হত্যা করতে পারতেন। অর্থাৎ ঘটনাটি কোন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি এ ঘটনা (সন্তানকে হত্যা) ঘটিয়েছেন।
[৭] পরে সব পক্ষের বক্তব্য শুনে সন্তান হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পিতার সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় দেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।