লিহান লিমা: [২] মিয়ানমারে সেনা অভ্যূত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা খুব কম প্রভাবই ফেলতে পেরেছে। জান্তা সরকার ৬ হাজার ৪২১ জন রাজনৈতিক বন্দির মধ্যে ২ হাজার ২০০ জনকে মুক্তি দিলেও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল ও প্রতিবাদকারীদের ওপর সহিংসতা চালানো নিয়ে এতটুকু অনুশোচনা দেখায় নি। ইউরোএশিয়া রিভিউ
[৩] ১৯৬২ সাল থেকেই তিনটি কাঠামোর ওপর ভিত্তিকে মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনা আধিপত্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, জাতিগত সংখ্যালঘুদের চেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠদের আধিপত্য দেয়া এবং চীন, ভারত, রাশিয়া ও আসিয়ানের সমর্থন।
[৪] ২০০৮ সালে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপে মিয়ানমারে নতুন সংবিধান তৈরি হলেও তাতমাদাও পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন নিশ্চিত করে যা কোনো সাংবিধানিক সংস্কারকে ভেটো দেয়ার ক্ষমতা প্রদান করে।
[৫] মিয়ানমারের খনিজ, তেল ও গ্যাস সম্পদের ওপর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সংবিধান তাতমাদাওকে সম্পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা দিয়েছে। ১৯৯০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তাতমাদাওয়ের কোম্পানি ‘মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিং লিমিটেড’ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।
[৬] বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন নিয়েই দেশটির সেনবাহিনী রোহিঙ্গাদের মতো জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালায়। এমনটিক অং সান সু চির গণতান্ত্রিক সরকারও সংখ্যালঘুদের পাশে থাকে নি। সেনাবাহিনী বার্মিজ জাতীয়তাবাদীদের থেকে অতীতে সমর্থন পেয়েছে এবং এখনো পাচ্ছে।
[৭] মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদে নজর ও বঙ্গোপসাগরে আধিপত্যের জন্য জান্তার সঙ্গে আপস করছে চীন। মিয়ানমারে যে সরকারই থাকুক না কেনো কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণে ভারত তাদের পক্ষ নেয়। চীনের পর রাশিয়া মিয়ানমারের বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। অন্যদিকে আসিয়ানভূক্ত দেশ থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরে কর্তৃত্ববাদী সরকার রয়েছে। ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়াও গণতান্ত্রিক আদর্শের চেয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়।
[৮] এই সবকিছু মিলিয়েই মিয়ানমারে গণতন্ত্রের সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যত। প্রশ্ন হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলেও কি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে?
[৯] অতীত অভিজ্ঞতা বলছে দেশটিতে গণতন্ত্র কেবল বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের জন্যই। সু চি নিজে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যায় সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছেন এবং তার শাসনামলেই লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলো।