ইমরুল শাহেদ: মহামারির এই সময়টায় চম্পা বাড়িতেই সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, এই অবসরে অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ে। বিশেষ করে পদ্মানদীর মাঝি আমার জীবন দর্শন পাল্টে দিয়েছে। অনেক সময়ই ভাবি আমাদের শিল্পীদের জীবনটা আসলে কি। আমাদেরকে অনেক কিছু আড়াল করতে হয়। মনে দুঃখ থাকলেও আমাদেরকে হেসে কথা বলতে হয়। আবার মনের মধ্যে সুখ থাকলেও ক্যামেরার সামনে গিয়ে দুঃখের দৃশ্য করতে হয়। এভাবে সাতরঙা মন নিয়েই আমাদের শিল্পীদের জীবন নির্বাহ করতে হয়। একটা বৈপরিত্য নিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের একটা সত্তা তৈরি হয়। তার নিয়ন্ত্রণ শেষ পর্যন্ত আমাদের হাতে থাকে না। আসলে আমাদের জীবনটাই এমনই।
তিনি স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আগে আমি চলচ্চিত্রে কাজ করতাম বাণিজ্যিক তারকা হিসেবে এবং দর্শক আমাকে সেভাবেই জানত। কিন্তু প্রত্যেক শিল্পীর মনের মধ্যে একটা ক্ষুধা থাকে। সেই ক্ষুধা আরো উল্লেখযোগ্য এবং গভীর কিছু করার। আমি বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করি, দর্শক সিনেমা হলে যায় আনন্দ করে, হাত তালি দেয়। কিন্তু সিনেমা হল থেকে বেরিয়েতো তারা সব কিছু ভুলে যায়। তাতে কি আমার শিল্পী জীবনে পরিপূর্ণতা আসছে? আসছে না। এছাড়া দর্শকের মনে রাখার মতো কোনো চরিত্র আমি পাইওনি, করিওনি। পদ্মানদীর মাঝি ছবিটা আমার সেই ক্ষুধা পূরণ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে আমার একটা ঘটনা মনে পড়ছে - পদ্মানদীর মাঝি ছবিটি করার অনেকদিন পর বিমানে আমি আমেরিকা যাচ্ছিলাম। আমার পাশের কাছাকাছি আসনে ছিলেন স্বনামধন্য এক ব্যক্তি¡। আমি লক্ষ্য করলাম তিনি তার আসনটি ছেড়ে আমার দিকেই আসছেন। কাছে এসে সহাস্যে বললেন, আমি পদ্মানদীর মাঝি ছবিতে আপনার কাজ দেখেছি। খুবই অভিভূত হয়েছি আপনার কাজ দেখে। তার কথা শুনে ভিতরে ভিতরে আমার মনটা ভরে উঠলো। আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। শিল্পী হিসেবে আমি মানুষের মনের মধ্যে থাকতে চাই। সব ছবি দিয়ে সে আশা পূরণ হয় না। সেজন্য ছবির মতো ছবি করতে হয়। আজ এতো বছর পরও মানুষ পদ্মানদীর মাঝির রেফারেন্স টেনে টেনে আমার প্রশংসা করে। এটা আমার জীবনে অনেক বড় একটা পাওয়া।