শিরোনাম
◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা ◈ ভারতের নেপাল নীতিতে 'রিসেট বাটন' চাপলেন মোদি, শিক্ষা বাংলাদেশের কাছ থেকে

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২১, ০৫:২২ সকাল
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২১, ০৫:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোকিল ছাড়া এমন কোন পাখি পরের বাসায় ডিম পারে

নিউজ ডেস্ক: যদি প্রশ্ন রাখা হয়, কোন পাখি বাসা বাঁধে না? তাহলে অনেকেই জবাবটা সহজে দিতে পারবেন- কোকিল। শুধু কোকিলই নয়, কোকিলের জাতভাই পাপিয়া, চোখ গেল, বউ কথা কও এবং ছোট কোকিলরাও বাসা বাঁধে না; সবাই চুরি করে বা কৌশল খাটিয়ে ভাতশালিক-ছাতারেসহ অন্য পাখির বাসায় ডিম পেড়ে রাখে। এবার যদি প্রশ্ন রাখা হয়- কোন পাখি বাসা বাঁধে না বটে, পরের বাসায় পাড়ে না ডিম, অথচ বছর বছর ডিম পেড়ে ছানা তোলে? এ প্রশ্নের জবাবটা বেশ কঠিন। বাসা না বেঁধে ডিম-ছানা তোলা পাখিটার নাম হলো দিনেকানা। নিশাচর এই পাখি দিন কাটায় ছায়া ছায়া-মায়া মায়া বনবাগানের তলদেশের মাটিতে বসে; ঝরাপাতার দঙ্গল খুবই পছন্দ এদের।

আর এদের শরীরের রংটাও সাদা, বাদামি, সোনালি, হলুদ ইত্যাদির সমন্বয়ে এমন শিল্পিতভাবে সুবিন্যস্ত যে, মাটি বা ঝরাপাতার ওপরে কাটা গাছের গুঁড়ির ওপরে কিংবা কাটা বাঁশের গুঁড়িতে বসে থাকলেও এরা পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকে। যাকে বলে ক্যামোফ্লেজ। কাছে গিয়েও দেখতে পাওয়া দুস্কর। এদের ডিম-ছানা তোলার ভরা মৌসুম বসন্ত বর্ষাকাল। প্রজনন মৌসুমে এদের 'চঙ্ক চঙ্ক-চাক চাক' ধরনের জোরালো ধাতব ডাকে জনপদ-বন ও বাগান মুখরিত হয়। সে বড় কাব্যিক-সুন্দর ছন্দময় ডাক। এরা ডিম পাড়ে মাটিতে ঝরে পড়া পাতার ওপর। বাঁশঝাড় ও ঝরা বাঁশপাতা খুবই পছন্দের। ডিম পাড়ে দুটি। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৫-১৮ দিনে।

ডিমে তা দেওয়াকালীন ও ডিম ফুটে ফুটফুটে দুটি ছানা হওয়ার পর এবং ছানারা উড়তে শেখা না পর্যন্ত এরা ছানা বুকে আগলে বসে থাকে দিনভর। প্রয়োজনে বর্ষাকাল বা ঝোড়ো দিনে এরা একই কাজ করে। নিশাচর পাখি তো! এবার আরও একটি প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক। কোন পাখি প্রয়োজনে ডিম ও ছানা স্থানান্তর করতে পারে? হ্যাঁ, এই দিনেকানা পাখিরা। এদের ঠোঁট ছোট বটে, কিন্তু হাঁ করলে সেটা সোনাব্যাঙের হাঁয়ের মতো বড় হয়ে যায়, ওই মুখে আলতোভাবে ডিম বা ছানা মুখে ধরে সরিয়ে নিয়ে রাখে প্রয়োজন মতো। ছানা স্থানান্তরের সময় প্রয়োজনে পা-ও কাজে লাগায়। আমার ৬০ বছরের অভিজ্ঞতায় এ রকম স্থানান্তরের দৃশ্য বহুবারই দেখেছি।

গত ২৭ মার্চ আমার গ্রাম ফকিরহাটের সাতশৈয়া থেকে 'বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাব'-এর শিপলু খান ফোন করে আমাকে তাদের বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে। সপ্তাহে সে একবার মই বেয়ে ছাদে উঠে নানা রকম ঝরাপাতার স্তূপ ঝাড়ূ দিয়ে পরিস্কার করে। তো ওইদিন ছাদে উঠতেই সে দেখতে পায় দিনেকানাটিকে; ছাদের ঝরাপাতার ওপরে বসে দু'পাখা ঝাপটে শিপলুকে ভয় দেখানোর প্রয়াস পাচ্ছে। খবরটি আমার কাছে ব্যতিক্রমী।

জীবনে আমি মাত্র চারবার ব্যতিক্রম জায়গায় ওদের ডিম-ছানা তুলতে দেখেছি। ক্লাস থ্রিতে পড়ার সময় আমাদের গোয়ালঘরের একচালা খড়ের চালার ঝরাপাতার ওপর; ১৯৬৯ সালে এক বাড়ির একচালা টিনের চালের ওপর, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশের গ্রামের পরিত্যক্ত হিন্দুবাড়ির একতলা ছাদের শ্যাওলার ওপর ও ১৯৯৯ সালে চালাবিহীন পরিত্যক্ত একটি ঘরের মাচানের ওপর। শিপলুর ঘটনাটি যোগ করলে হবে পাঁচবার। শিপলু পাখি-পাখির ডিম-ছানার ছবি আমাকে পাঠায়- পাঠায় চমৎকার একটি ভিডিও চিত্র। জীবনে পঞ্চমবারের মতো সে মুখে ধরে ছানা ধরতে দেখে পাখিটিকে দু'দিন বাদে। অন্য কাণ্ডকারখানার ভিডিও করে।

দিনেকানা, রাতকানা, বাঁশকাটা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ফকিরহাট বাগেরহাটে প্রচুর আছে। আবাসিক এই পাখিটির ইংরেজি নাম Large- tailed nightjar। বৈজ্ঞানিক নাম Coprimulgus Macrurus। দৈর্ঘ্য ৩৩ সেন্টিমিটার। ওজন ৭৮ গ্রাম।

সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়