আহসান হাবিব : প্রায় সব মানুষকে দেখছি অপরকে নিয়ে লেখে, মন্তব্য করে। বলে কিছু মানুষ আছে এমন কিংবা তেমন ইত্যাদি। অথচ নিজেকে নিয়ে লেখে এমন মানুষ প্রায় চোখেই পড়ে না। কেন? আমার মনে হয় নিজেকে সব মানুষ সেরা ভাবে। গলির পুচকে ছোড়াটাকেও দেখি ডারউইনকে বানরের বাচ্চা বলে গালি দিচ্ছে। ফুটপাতের চায়ের আড্ডায় মার্ক্সকে গালি দিচ্ছে শালা নাস্তিক বলে।
দুদিনের পোলা, এখনো বাপের হোটেলে খায়, এমন মূষিক শেখ মুজিবকে বলছে, আত্মসমর্পণকারী! এখনো মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে, এমন নালায়েক রবীন্দ্রনাথকে বলছেÑ কবিতা লিখতে জানতেন না। এমন অজস্র। অথচ নিজের বলবার মতো কিছু নেই, ফুটো কলসি। তবে হ্যাঁ, মানুষ সব সময় অন্যের চোখ দিয়ে নিজেকে দেখতে চায়। যখন সে দেখে সে অন্যের তুলনায় কুয়োর ব্যাঙ, তখন লাফাতে থাকে। আবার অন্য কেউ যখন তার সম্পর্কে কিছু বলে, তখন তাকে ধুয়ে দেয়, অবশ্য প্রশংসা হলে মোমের মতো গলে যায়।
প্রতিটি আদর্শ অন্য আদর্শকে হীন বা ঊণ মনে করে। প্রতিটি ধর্ম মনে করে তার ধর্মই সেরা। যে নিজে মানসিক অবসাদগ্রস্ত, দেখি সেও অন্যকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উপদেশ দেয়। আবার নিজের সমস্যায় জর্জরিত, দেখি সে অন্যের সমস্যা এক মিনিটের মধ্যে সমাধান করে দিচ্ছে।
কোনো রাজনৈতিক দল নিজের ইশতেহার নিয়ে, ভুলভ্রান্তি নিয়ে কথা বলতে শুনি না। এক দল আর এক দলের মুণ্ডপাত করে চলেছে। অথচ নিজেরা লবডঙ্ক। পরচর্চা ছাড়া নিজেকে নিয়ে কোনো কথা নেই, কোনো আত্মসমালোচনা নেই। হয়তো আমিও সেই দলে।
লেখক : উপন্যাসিক
আপনার মতামত লিখুন :