মাহবুব কবির মিলন: বাবা মায়ের প্রতি অনুরোধ, বাচ্চাদের এমন শাসন করবেন না বা চাপ দেবেন না, যা তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। যা টেনে আনতে পারে এক অভিশপ্ত কালো অধ্যায়ের। সন্তান অমূল্য সম্পদ, আপনার রেসের ঘোড়া নয়। আমরা যে কাল পার হয়ে এসেছি, একাল সেকাল নয়। স্কুল থেকে ফেরার পর শরীরে শিক্ষকের বেতের দাগ দেখে মা খুশি হতেন। বাবা হাত-পা বেঁধে মেরে খাটের নিচে ফেলে রাখতেন দুষ্টামির জন্য।
একটা থাপ্পরও দিতে পারবেন না এখনকার বাচ্চাদের গায়ে। স্কুলে শিক্ষকেরা অন্য বাচ্চাদের সামনে কাউকে বকলে বা সামান্য মারলেও তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। এটাই যুগের পরিবর্তন। মেনে নিতেই হবে। আমি এক বাচ্চাকে জানি, স্কুলে একবার দুষ্টামি করার জন্য সিটের ওপর দাঁড় করিয়ে রেখেছিল টিচার কিছুক্ষণের জন্য। বহুদিন ট্রমাটাইজ ছিল বাচ্চা। স্কুলেই যেতে চাইত না। আমাদের স্কুল জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে সিটের ওপর দাঁড়িয়েই। মাঝে মাঝে এক পায়ে দাঁড়িয়ে। বসার সময় কম পেয়েছি। যুগের পরিবর্তন। বাচ্চাকে আদর দিয়ে ভালো-মন্দ শেখাবেন ছোটবেলা থেকেই। শেখাবেন সত্য-মিথ্যা। সত্যবাদী করুন তাদের। চাপ দিয়ে রেসের ঘোড়া নয়, ভাল মানুষ বানান তাদের।
আমাদের বাসার দুই দিকেই বড় এপার্টমেন্ট বিল্ডিং। আমাদের বিল্ডিং চারিদিকে বেশ জায়গা ছেড়েই বানানো হয়েছে। এই দুই এপার্টেমেন্ট থেকে দুই পাশের ফাঁকা জায়গায় ওপর থেকে বাচ্চারা মনের সুখে সমস্ত ময়লা ফেলে অনবরত। দেখা গেলো শুধু বাচ্চারা নয়, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পিতা মাতারাও। একজন কুকুর পালেন ছয় তলায়। এখন দেখি পোটলা করে কুকুরের মল এসে পড়ছে আমাদের ফাঁকা জায়গায়। শিক্ষা। এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন বাচ্চাকে? লাভ কি ফার্স্ট হয়ে, জ্ঞান বিজ্ঞানে বিরাট সার্টিফিকেট অর্জন করে! অমানুষ আর কুলাঙ্গার হবার চেয়ে লেখাপড়া না করাই ভালো।
ঢাকার নামকরা এক স্কুলের এক মেয়ে বিশতলা থেকে লাফিয়ে সুইসাইড করেছে মর্মে কয়েকটি স্ট্যাটাসে দেখলাম। অভাগী মেয়ে আমার। যতোটুকু পড়লাম তাতে বুঝলাম মায়ের অতিরিক্ত চাপ আর শাসন সহ্য করতে না পেরে সে এই কাজ করেছে। জানি না সত্য মিথ্যা। প্লিজ ভুলেও একাজ করবেন না। এখনকার বাচ্চারা খুব সেনসিটিভ। তাদের সহ্য করার ক্ষমতা খুব কম। যার ফলে তারা সংসার জীবনে গিয়েও খুব সমস্যায় পড়ে। মানিয়ে নিতে পারে না নতুন পরিবেশ। নতুন মানুষগুলোর অবাক করা ব্যবহার। ঘটে যায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা।
আমার দুই মেয়েকে আমরা কখনো একবারের জন্যও বলিনি তোমাদের প্রথম বা খুব ভালো রেজাল্ট করতে হবে। বলেছি, মানুষের মতো মানুষ হও। প্রতিটি পদক্ষেপে শিখিয়েছি তাদের মানুষ হবার মন্ত্র। তারা নিজেরাই বুঝে নিয়েছে মাথা তুলে দাঁড়াবার জন্য কতোটুকু পড়তে হবে, কী রেজাল্ট করতে হবে। আবারও সবার প্রতি অনুরোধ, বাচ্চাকে শাসন করার আগেই তাদের এমনভাবে পরিচালনা করুন, যাতে শাসন করা না লাগে। ফেসবুক থেকে