ইত্তেফাক : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় উত্পাদিত লবণের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে মাটির ওপরে রাখা লবণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিসিক জানায়, প্রায় সাড়ে ৫২ হাজার মেট্রিক টন লবণ ঘূর্ণিঝড়ে নষ্ট হয়েছে। উত্পাদিত এসব লবণ মাটির ওপর অরক্ষিত ছিল। বাঁধ ভেঙে পানি দ্রুত ঢুকে পড়ায় চাষিরা লবণ সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাননি। এমনিতেই এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম লবণ উত্পাদন হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা ও বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণের চাষ হয়ে থাকে। বছরের ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত লবণ উত্পাদনের মৌসুম। উত্পাদন প্রায় শেষ হয়েছে। চাষিরা তাদের উত্পাদিত লবণ নিরাপদ জায়গায় নিয়ে মজুত করে রাখছে। কেউ মাটির নিচে গর্ত করে, কেউ অন্য জায়গায় লবণ মজুত করে রেখেছে। কিছু লবণ মাঠ পর্যায়ে খোলা জায়গায় মাটির ওপরে রাখা ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে মাটির ওপরে থাকা এসব লবণে পানিতে তলিয়ে গেছে।
বিসিক জানায়, এবার লবণ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এ বছর উত্পাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। লবণ উত্পাদনের মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। উত্পাদিত লবণের বেশির ভাগই কৃষকদের কাছে অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিরা লবণ বিক্রি করেনি। বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের ডিজিএম জাফর ইকবাল ভুঁইয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন লবণের ক্ষতি হয়েছে। মোট উত্পাদিত লবণের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন লবণ এখনো প্রান্তিক চাষিদের কাছে মজুত রয়েছে। দাম কম হওয়ায় তারা বিক্রি করেনি। বর্তমানে চাষি পর্যায়ে প্রতি মণ ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তারা লবণ মাটির নিচে গর্ত করে রেখেছে।’
বিসিক সূত্র জানায়, গত বছর ৫৭ হাজার ৭২২ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছিল। বিগত কয়েক বছর যাবত্ লবণের বাজারে অব্যাহত মন্দার কারণে চাষিরা লবণ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। ফলে এ বছর ৫৪ হাজার ৬০০ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। লবণ চাষের সঙ্গে প্রায় ২৭ হাজার চাষি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। লবণ চাষিদের সংগঠন বাংলাদেশ লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় লবণের ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার সদর, মহেষখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লবণের ক্ষতি হয়েছে। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় প্রান্তিক চাষিদের কাছে প্রচুর লবণ মজুত রয়েছে।’
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির বলেন, সরকারিভাবে বিসিক চাহিদার চেয়ে লবণের উত্পাদন বেশি দেখানোর কারণে প্রকৃত মিল মালিকরা লবণ আমদানির সুযোগ পাচ্ছে না। বিসিক এবার ১৬ লাখ মেট্রিক টন লবণ উত্পাদনের কথা বললেও আমাদের হিসাবে সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি উত্পাদন হয়নি। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে লবণ আমদানি করে কম দামে বাজারজাত করছে।’
আপনার মতামত লিখুন :