ফারুক আহমেদ : সত্তরের দশকের কথা। আমাদের গ্রামে বাস করতো এক চোর। নাম ছিলো কালু। গায়ের রঙও ছিলো তার কুচকুচে কালো। তাই সকলে তাকে ডাকতো ‘কাইলা চুরা’। আর তার বাড়ির নাম ছিলো ‘কাইলা চুরার বাড়ি’। কাইলা চুরা ছিলো খুবই লাজুক প্রকৃতির। দিনের বেলা জরুরি কাজ ছাড়া সে বাড়ির বাইরে বের হতো না। পেটের দায়ে সে চুরি করতো। সে যে চোর সেইজন্য তার লজ্জার সীমা ছিলো না। জরুরি কাজে বাড়ি থেকে বের হলে কেউ যদি তাকে জিজ্ঞাসা করতো, কীরে কাইলা চুরা কই যাস? সে লজ্জায় মাথা নিচু করে অত্যন্ত ক্ষীণস্বরে বলতো, বাজারে। চাইলো কিনতে। কাইলা চুরার সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো সে কখনো নিজের গ্রামে চুরি করতো না। অমাবস্যার রাতে খালি গায়ে শরীরে সরিষার তেল মেখে সে চলে যেতো দূর কোন গাঁয়ে। সেখানে গিয়ে সে চুরি করতো। নিজের গ্রামের প্রতি ছিলো তার গভীর মমতা। তখনকার দিনে গ্রামে ছিলো হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। তাদের ছিলো ‘লবন আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থা। পুরনো কাপড়চোপড় আর ঘটি বাটি বদনা ছাড়া ওইসব বাড়িতে চুরি করার মতো তেমন কিছুই ছিলো না।
সারারাত কঠোর সতর্কতা আর অমানুষিক পরিশ্রম করে কাইলা চুরা যা চুরি করতো সেইসব চোরাই মাল মহাজনের কাছে বিক্রি করে খুব বেশি হলে সে পেতো দশ থেকে বারো টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে, যা তিন হাজার টাকার বেশি না। অথচ আমার ধারণা বর্তমান সময়ে একেকজন চোরের আয় দিনে দুই তিন লাখ টাকা। রাঘব বোয়াল চোরদের আয় দিনে পঞ্চাশ ষাট লাখ টাকাও আছে। শুনি এমন চোরও আছে যারা বছরে দশ বারো হাজার কোটি টাকাও বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে উপার্জন করে। এককথায় যা চুরি। আবার এমন চোরও নাকি আছে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। আনন্দ ফূর্তিতে দিন কাটাচ্ছে। সত্তরের দশকে কাইলা চুরা একরাতে দশ টাকা চুরি করে লজ্জায় গ্রামের মানুষকে মুখ দেখাতে লজ্জা পেতো। অথচ আশির দশক থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত অনেক চোর হাজার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন পন্থায় চুরি করেছে এবং করছে। লজ্জা পাওয়াতো দূরের কথা তারা সিনা টান টান করে হাঁটছে। তাদের চোখে মুখে লজ্জার লেশমাত্র নেই। কারণ তারা নির্লজ্জ চোর। তারা বেহায়া চোর।
বি:দ্র: সমাজে অনেক ভালো মানুষ আছেন যারা কঠোর পরিশ্রম করে, সৎ পথে অর্থ উপার্জন করছেন। তাদের সালাম। ফেসবুক থেকে