শিরোনাম
◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২১, ০৪:১৪ সকাল
আপডেট : ২৩ মে, ২০২১, ০৪:১৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ড. আহমদ আল কবির: জাতির পিতার জুলিও-কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তি ছিলো বঙ্গবন্ধুর প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি 

ড. আহমদ আল কবির: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি শান্তি পদকপ্রাপ্তি সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের সম্মান। জাতির পিতার জন্য প্রথম বড় ধরনের একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিশ্ব তখন দুইভাগে বিভক্ত ছিলো। একটি ছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক দেশগুলো। তখন আমরা বলতাম সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করতো। আর সমাজতান্ত্রিক এবং জোট নিরপেক্ষ দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব করতো রাশিয়া। তখনকার বিশ্বে এ ধরনের একটি পদকপ্রাপ্তি নতুন দেশটির জন্য একটি বড় ধরনের সম্মাননা এবং জাতির পিতার জন্য একটা বড় ধরনের স্বীকৃতি।

সাধরাণত দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের পরে অনেক লোক মারা যায়, বিভিন্ন ধরনের মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া শুরু হয়। জাতির পিতা দেশে ফিরে এসেই প্রথমে যে কাজটি করেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ যারা পাকিস্তানে আটকে গিয়েছিলো তাদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের মহান দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যে দেশটি ছিলেঅ ভঙ্গুর, দেশে কিছুই ছিলো না, সেই অবস্থায়ও এই মহান দায়িত্বটি অত্যন্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি পালন করেছিলেন। আমাদের এককোটির মতো শরণার্থী যারা ভারতে চলে গিয়েছিলো তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা একটা বড় ধরনের মানবিক কাজ ছিলো। এই মানবিক কাজগুলো তিনি করেছেন। অন্যদিকে জাতির পিতা সবসময় বলেছেন, তিনি শোষিতের পক্ষে। যারা শোষণ করে তাদের বিরুদ্ধে এবং শোষিতের পক্ষে।

বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক বা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যারা শোষিত মানুষ। প্যালেস্টাইনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেসমস্ত সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে, মুক্তিকামী মানুষ যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেই মানুষগুলোকে জাতির পিতা সমর্থন দিয়েছেন তার পুরো সময়টাতে। বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণ, বাংলাদেশের মতো নতুন একটি দেশে যখন খাদ্য, রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্প কারখানা সবই নতুনভাবে করতে হয়েছিলো। পাকিস্তানের বঞ্চনার কারণে সেগুলো গড়ে ওঠেনি। সেগুলোর পাশাপাশি এসব মানবিক কাজগুলো তিনি চালিয়ে যাচ্ছিলেন দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে। আরেকটি মানবিক কাজ তিনি করেছেন সেসময়ে। পাকিস্তানি হানাদার কর্তৃক আমাদের লাখ লাখ নারী নির্যাতিত হয়েছেন। তারা তখন বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। নিগৃহীত এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করার জন্য বিশাল উদ্যোগ নিয়েছেন। এখনকার মতো তখন এতো স্যোশাল মিডিয়া ছিলো না, টেলিভিশন ক্যামের ছিলো না। এগুলো থাকলে বিশ্ববাসী আরও ভালোভাবে জানতো। মানবিক ও ভালো কাজের জন্য, মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং শোষিত ও বঞ্চিত মানুষকে সামনে নিয়ে এসে সামাজিক উন্নয়ন সাধন করার লক্ষ্যে কাজ করার যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি তার জন্য বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি পদক পেয়েছিলেন।

আমাদের দেশের ভেতরে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যারা আছেন তারা বিভিন্নভাবে তখন নিগৃহীত ছিলো। তাদের তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন এবং তারাও তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সকল ধর্মের মানুষকে তিনি আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন এবং বিশ্বাস জন্মাতে পেরেছিলেন। যাতে করে এদেশের সকল শ্রেণি-পেশা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে এই লক্ষ্যেই জাতির পিতা কাজ করেছিলেন বলেই কিন্তু তাকে এই স্বীকৃতি এবং সম্মাননা আন্তর্জাতিকভাবে দেওয়া হয়েছিলো। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও জাতির পিতার একই ধরনের ভূমিকা ছিলো। জাতির পিতা একদিকে যেমন সম্মানিত হয়েছেন, বাঙালি জাতিকেও জাতির পিতার মাধ্যমে বিশ্ববাসী এই সম্মাননাটি দিয়েছিলো। বিশ্বের মুক্তিকামী ও প্রগতিশীল মানুষ যারা শোষিতের পক্ষে তারাই এই সম্মাননাটি দিয়েছিলেন।

জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দেখানো ও নির্দেশিত পথে অত্যন্ত সাহসীভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। জাতির পিতা তার কাজের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন এবং বাংলাদেশের মুক্তি এনে দিয়েছিলেন। জাতির পিতা দেশগড়ার জন্য যে সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন এটা খুবই সামান্য সময় ছিলো। তার দ্বিতীয় বিপ্লবের লড়াই, যেটা অর্থনৈতিক মুক্তি লড়াই, এই দায়িত্বটা পালন করছেন তারই কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে তাকালে দেখা যায়, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে অন্যন্য একটি মডেল উপস্থাপন করছেন দারিদ্র্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টি করে। এখন দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ বিভিন্নভাবে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে।  বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সম্মাননার মাধ্যমে যে সামাজিক সুরক্ষা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে মেহনতি মানুষ ও সমাজের বঞ্চিত শ্রেণির মানুষদের জন্য। এখানে বিধবা ভাতা আছে, মাতৃত্বকালীন, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতাসহ নানা ধরনের ভাতা চালু করে তিনি জাতির পিতার নির্দেশিত পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। উন্নয়নের ধারাকে তিনি যেভাবে গতিশীল করেছেন এটা লক্ষ্যণীয়। বিশ্বের কাছে তিনি এটাকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতির পিতার যে কামনা ছিলো এই দেশের মানুষের অর্থনৈতকি মুক্তির লড়াই। জাতির পিতা চারটি জিনিসকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ছিলো কৃষি।

কৃষিকেও জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সর্বাগ্রে স্থান দিয়ে কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। শুধু বিপ্লব বলবে কম হবে কারণ বাংলাদেশে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য বলতে শুধু ধান-চাল নয়, মাছ, মাংস ও পোল্ট্রিসহ সব ধরনের কৃষিজাত সামগ্রী ও পন্যকে একটি সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে গেছেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়ন। যুব সামাজকে কর্মে রাখতে হবে। জাতির জনকের নির্দেশেই রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তার অন্যতম প্রধান খাত হিসেবে বেছে নিয়েছেন কর্মবান্ধব শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজকে আগামী দিনের জন্য তৈরি করাকে। এই কার্যক্রমকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ে। আমরা দেখছি আমাদের প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীই এখন বিদেশে যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের রেমিটেন্সের প্রবাহ যেসময় কমার কথা ছিলো কমেনি। অনেক দক্ষ জনগোষ্ঠী বিদেশে যাচ্ছে বলেই আমরা রেমিটেন্স প্রবাহে গতি পেয়েছি। যারা রেমিটেন্স পাঠায় তাদের জন্যও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে সরকার উৎসাহিত করছেন। দেশের জন্য যারা কাজ করে তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জাতির পিতার নির্দেশিত পথ ছিলো।

তৃতীয়ত যেটা করা হয়েছে যা জাতির পিতার নিদের্শনার মধ্যে ছিলো। সকলের জন্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা বিধান করা। এ কারণেই শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করেছেন, দেশের প্রত্যন্ত আঞ্চলের শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। মেয়েদের জন্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করে বিশ্বের কাছে একটি বড় ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কারিগরি শিক্ষাকেও ব্যাপক ভিত্তির ওপর দাড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিকেন্দ্রীকরণের কথাও সরকার অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলে দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর আমাদের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদকে কার্যকর করা হয়েছে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথযাত্রাকে আরও সুদৃঢ় করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক বাজেট এবং অন্যান্য কর্মসূচিগুলোকে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এগুলোতে আরও অনেক কাজ করতে হবে। কিন্তু জাতির পিতার নির্দেশিত পথেই কিন্তু আজ দেশ চলছে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি এই কাজগুলো করতে যেয়ে অনেক বাধা আসছে। যারা দেশদ্রোহী, যারা বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিতে পারেনি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে মেনে নিতে পারেনি। তারা বিভিন্নভাবে এই যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু সকল বাধাকে অতিক্রম করে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জাতির পিতার নির্দেশিত পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তার সকল কাজের সফলতা কামনা করি। পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমিরুল ইসলাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়