অনলাইন ডেস্ক: করোনার আঘাতে নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। বেকার হয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে।
এবারই প্রথম দেশের ১৫০টি উপজেলার সব বয়স্ক মানুষ ও বিধবা নারীকে ভাতা দেওয়া হবে। এমন ঘোষণা থাকছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে। এছাড়া নতুন করে ভাতা পাবেন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবহণ শ্রমিকরা। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বাড়বে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতাও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ জনকে এই সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। অর্থ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় চলতি বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক ব্যক্তি এবং স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা নারীদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে এটি ১৫০টি উপজেলার সব বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী এবং বয়স্কদের ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাও বাড়ানো হবে। এসব বিষয় নিয়ে এখন মন্ত্রণালয়ে কাজ চলছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
কোভিড-১৯-এর কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বেশি আঘাত এসেছে। এজন্য নতুন বাজেটে ১৫০ উপজেলায় সব বয়স্ক ব্যক্তিকে ভাতার আওতায় আনা হবে। বর্তমানে ১১২ উপজেলার প্রত্যেক বয়স্ক ব্যক্তিই ভাতা পাচ্ছেন। ওই হিসাবে আসন্ন বাজেটে বয়স্ক ভাতা পাবেন ৫৭ লাখ জন। বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে ৮৯ লাখ জনকে। ১৫০ উপজেলার সব বয়স্কজনকে অন্তর্ভুক্ত করায় আরও ৮ লাখ সুবিধাভোগী যুক্ত হচ্ছেন নতুন করে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। চলতি বছর এ খাতে বরাদ্দ আছে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
পাশাপাশি ১৫০ উপজেলায় প্রত্যেক বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাকে ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। এতে সুবিধাভোগী ২০ লাখ ৫০ হাজার থেকে বেড়ে ২৪ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়াবে। এজন্য বরাদ্দ থাকছে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বাজেটে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ আছে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
আগামী বছর আরও যারা কর্মসূচির আওতায় আসছেন, এর মধ্যে রয়েছে ১৮ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী। এছাড়া ৭ লাখ ৭০ হাজার দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, পৌনে তিন লাখ ল্যাকটেটিং মা। আরও ভাতা পাবেন মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
সূত্র আরও জানায়, এ বছর নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কমে আসবে। চলতি বছর ২ লাখ মুক্তিযোদ্ধা পাচ্ছেন এ ভাতা। নতুন বছরে সেটি আরও কমে আসবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এই ভাতা বাড়ানোর বিষয়টি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন। সে আলোকে অর্থ ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
নতুন বাজেটে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে। বর্তমানে ৮৬ হাজার জনকে এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে এ ভাতা দেওয়া হবে ৯৫ হাজার জনকে।
নতুনভাবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আসছেন সড়ক ও নৌপরিবহণ শ্রমিকরা। সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে গণপরিবহণ ও নৌপরিবহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে এসব যানবাহনে কমরত ড্রাইভার, হেল্পার ও সুপারভাইজারদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া একই জেলার ভেতরে চলাচলের সুযোগ দেওয়া হলেও এ ধরনের যানবাহনে যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সড়ক ও নৌ খাতের পরিবহণ শ্রমিকদের নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ খাতের শ্রমিকদের ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এজন্য আগামী বাজেটে একটি বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসাবে ৩৫ লাখ কর্মহীন দরিদ্রকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
ওই ৩৫ লাখের মধ্যে পরিবহণ শ্রমিকও রয়েছেন। তাদের বাদ দিয়ে বাকি পরিবহণ শ্রমিকদের তালিকা জেলা শ্রশাসকদের কাছে চাওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের মাধ্যমে এ সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরকালীন পেনশনও দেওয়া হবে এই কর্মসূচির আওতায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বলয় বাড়াতে হবে। বিশেষ করে নগরের দরিদ্ররা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কারণ বাসস্থান, সুপেয় পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, সন্তানের শিক্ষা, চিকিৎসা-এসব চাহিদা মেটাতে নগর দরিদ্রদের হিমশিম খেতে হয়। বস্তি এলাকার দরিদ্র পরিবার, বিশেষ করে শিশুদের এর আওতায় আনতে হবে। তাদের জন্যও পৃথক কর্মসূচি থাকা দরকার। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রণীত হয় শুধু দরিদ্রদের কথা মাথায় রেখে। অরক্ষিত মানুষের কথা বিবেচনা করা হয় না। মহামারির মতো দুর্যোগের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয় না। যুগান্তর