এম আমির হোসেন: বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস দম্পতির দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের বিচ্ছেদে বাঙালি তার অলস ও ভাবালুতাপূর্ণ চিন্তার পক্ষে আরেকটি মওকা খুঁজে পেলো। ‘টাকায় সুখ কেনা যায় না’-এই ভেবে তারা বরাবরের মতোই এবারও লাভ করবে নির্বোধ অনাবিল কোনো সুখ। টাকা-পয়সা বিষয়ক ঘটনাকে বাঙালি সর্বদাই সন্দেহের চোখে দেখে। তাদের চোখে অর্থহীন নিঃস্ব জীবনই সৎ ও আদর্শ জীবন। অর্থই সকল অনর্থের মূল, অর্থ দিয়ে সুখ কেনা যায় না এগুলো আমাদের শৈশবের শিক্ষা। আভিজাত্য, চাকচিক্য, সঞ্চয়, উন্নত বাড়ি, দামি গাড়ি, ব্যবসা এগুলোর প্রতি অনাগ্রহকেই আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য বলে ধরে নেওয়া হয় এবং এর ব্যতিক্রম যারা ভাবেন তাদের পুঁজিবাদ, মিডিয়া প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত ভোগবাদী হালকা মাত্রার লোক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নির্বোধ বাঙালির এই দুর্দশা, দারিদ্র্য, স্বাস্থ্যহীনতা, পোকামাকড়ের মতো জীবন যাপনের পিছনে এই ভাবনাগুলোও কম দায়ী নয়। উন্নত সমাজ বিনির্মাণের জন্য অর্থের বেগবান প্রবাহ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কোনো অর্থ না-থাকা জীবনকে কখনো আদর্শমণ্ডিত করে না; বরং মেধা ও শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জনই জীবনকে অর্থপূর্ণ করে। এক প্রজন্মের উপার্জিত অর্থ পরবর্তী প্রজন্মকে এনে দেয়ে আরেকটু উন্নত-জীবন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ধারা চলমান থাকলে সমাজ উন্নত হয়, দেশ এগিয়ে যায়। কপট এই অর্থ-বিমুখতার কারণে খেয়ে-পরে কোনোরকম কাটিয়ে দেওয়া জীবনকেই আমরা আদর্শ জীবন বলে মনে করি। অর্থ-বিমুখতার দর্শনে প্রভাবিত বলে আমরা আজও বিশ্বমানের বহুজাতিক কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারিনি। স্বনির্ভর অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা কিংবা নিদেনপক্ষে সকল ক্ষেত্রে দেশীয় বাজার ধরে রাখার মতো নিজস্ব প্রতিষ্ঠানও তৈরি করতে পারিনি। কোনোরকম খেয়ে-পরে জীবন পার-করা চিন্তার এই দারিদ্র না ঘুচলে ‘উন্নত সমাজ’ কখনো পাওয়া হবে কি আমাদের? ফেসবুক থেকে