মেহেদী হাসান: [২] বৃটিশ সাম্রাজ্যে সুর্য অস্তমিত হয়না! বিশ্বজুড়ে প্রবাদপ্রতিম এই ধারণাকে ধুলিস্যাত করেছিল মাস্টারদা সুর্যসেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন অকুতভয় সৈনিক। তিনদিন স্বাধীন রেখেছিল চট্টগ্রামকে। সেই ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী যোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী নারী শহীদ।
[৩] প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ মে পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মা প্রতিভাদেবী এবং বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার।
[৪] ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রীতিলতা ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করার পর ভর্তি হন ঢাকার ইডেন কলেজে। ১৯৩০ সালে তিনি আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে পঞ্চম হন। এরপর কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩২ সালের ডিসটিংশনসহ বিএ পাস করেন।
[৫] ইডেন কলেজে পড়ার সময় প্রীতিলতা বিপ্লবী লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন। লীলা নাগ ওই সময় দীপালী সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন। দীপালী সংঘ ছিল ঢাকার বিপ্লবী দল শ্রীসংঘের নারী শাখা।
[৬] ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রামে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব, যার ফটকে লেখা ছিল ‘‘Dogs and Indians not allowed’’ আক্রমনের সিদ্ধান্ত হলে সূর্যসেন নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন প্রীতিলতাকে।
[৭] সফল আক্রমন শেষে সবাই ফিরে আসতে সক্ষম হলেও গুলিবিদ্ধ হন দলনেতা প্রীতিলতা। তবে তিনি যে অগ্নিকন্যা, জীবন দেবেন, কিন্তু ইংরেজদের হাতে ধরা দেবেন না কিছুতেই। তাই গুলিবিদ্ধ অবস্থতাতেই ‘পটাশিয়াম সায়ানাইড’ খেয়ে আত্মদান করলেন।
[৮] যুদ্ধে যাবার আগে মা কে উদ্দেশ্য করে একটি চিরকুট লিখে রেখে গিয়েছিলেন তিনি, ‘মাগো, অমন করে কেঁদোনা! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?
[৯] প্রীতিলতা মাত্র ২৩ বছর বয়সে মৃত্যুকে বরণ করে নেন। তাঁর আত্মদান বাংলা ও ভারতের বিপ্লবীদের আরো উদ্দীপিত ও বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে সক্রিয় করে তোলে। প্রীতিলতার মৃতদেহের পোশাকে নিজ হাতে লেখা ছিল, ‘আমরা দেশের মুক্তির জন্য এই সশস্ত্র যুদ্ধ করিতেছি। অদ্যকার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি অংশ। ব্রিটিশরা জোরপূর্বক আমাদের স্বাধীনতা ছিনাইয়া লইয়াছে।’
[১০] প্রীতিলতা আজ নেই। কিন্তু তাঁর সেই বিপ্লবী চেতনার স্ফুলিঙ্গ এখনো আমাদের উজ্জীবিত করে দেশপ্রেম এবং স্বাধিকার আন্দোলনে। তিনি মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে চিরজাগরূক হয়ে আছেন আমাদের হৃদয়তন্ত্রীতে।