শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ০৪ মে, ২০২১, ০২:০৭ দুপুর
আপডেট : ০৪ মে, ২০২১, ০২:০৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. লেলিন চৌধুরী: দৃশ্যপট দিল্লি, আর্ত বাংলাদেশি এবং মানবিক হাইকমিশন

ডা. লেলিন চৌধুরী : স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ব্যাংকে চাকরি করেন। স্বচ্ছল সংসার। দুটি সন্তান। ঢাকা শহরে বসবাস। দিনগুলো চমৎকার কেটে যাচ্ছিলো। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করে দুঃসময়ের খড়গ নেমে এলো। স্বামী ভদ্রলোক হার্ট-অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করলেন। তাকে হারিয়ে শোকবিহ্বল ভদ্রমহিলা। শোক কাটিয়ে বাঁচার প্রয়োজনে আবার জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়। ব্যাংকের চাকরি। করোনার দুঃসময়েও অফিস করতে হয়। তিনি পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। সময়ের নিজস্ব নিয়মে দিন কেটে যায়। নারীটির জীবন ক্রমান্বয়ে করেনাকালীন নয়া-বাস্তববতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে চলমান থাকে। দিন কয়েক আগে স্বামী হারানোর একবছর পার হয়েছে। ছুটির দিন। সময় নিয়ে লম্বা গোসলে বসেছেন। ঘষে ঘষে শরীরের ময়লা তুলছেন। ডানস্তন পরিষ্কার করার সময়ে হাতে শক্তমতো কিছু একটা লাগলো। মহিলা চমকে উঠলেন। পরদিন ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার সব শুনলেন। সময় নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর কয়েকটি পরীক্ষা বা টেস্ট দিলেন। সমস্ত পরীক্ষার ফলাফল দেখে ডাক্তার জানালেন তার ডানস্তনে ক্যান্সার হয়েছে। মহিলার পৃথিবী দুলে উঠলো। মন বিশ্বাস করতে চায় না। নিশ্চয়ই ডাক্তার কোথাও ভুল করেছেন! পরদিন আরেকজন ডাক্তারের কাছে গেলেন তিনি। এভাবে মহিলাটি ঢাকার বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নিলেন। সবাই তাকে জানালেন, ‘তার ডানস্তনে ক্যান্সার হয়েছে এবং সেটা অনেকদূর ছড়িয়ে গিয়েছে। অপারেশন করে স্তনটি ফেলে দিতে হবে। তারপর কেমোথেরাপি নিতে হবে।’

মন মানতে চায় না। তার মনে হলো ‘আমাদের দেশের ডাক্তারেরা ভুল করতে পারে। দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গেলে কেমন হয়? বিদেশি চিকিৎসক নিশ্চয়ই স্তনটি ফেলে না-দিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে পারবেন। করোনার ভীতি উপেক্ষা করে মার্চের শেষ সাপ্তাহে দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের রাজধানী দিল্লিতে চলে গেলেন। ভদ্রমহিলা আটচল্লিশ পেরিয়ে উনপঞ্চাশে পা দিয়েছেন। তার ছেলে দুজনের বয়স যথাক্রমে আটাশ ও বিশ বছর। দিল্লিতে তিনি কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করেন। সবাই বাংলাদেশের ডাক্তারের মতের সাথে একমত হন। শেষপর্যন্ত তিনি দিল্লির রাজীব গান্ধী ক্যান্সার ইন্সটিটিউট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার-এ ভর্তি হন। তার অপারেশন হয়। ক্যান্সার অনেকদূর ছড়িয়ে গিয়েছিল, তাই অপারেশনটা ছিল বেশ বড় ধরনের। দুইভাই পালা করে মায়ের পাশে থাকে। এপ্রিলের শেষসপ্তাহের একদিন। ছোট ছেলেটি জ্বর, শরীরব্যথা ও কাশি অনুভব করে। আগে থেকেই তার অ্যাজমার সমস্যা ছিলো। করোনা টেস্ট পজিটিভ। বুকের সিটিস্ক্যানে দেখা যায় ফুসফুসে প্রদাহ শুরু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করা দরকার। কিন্তু দিল্লিতে এখন হাসপাতালে বেড পাওয়া সোনার হরিণের মতো বিষয়। তাই বাধ্য হয়ে হোটেলে থেকেই চিকিৎসা নিয়ে হয়। এদিকে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করেছে। বড়ভাই অনেক দৌড়ঝাঁপ করে বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার যোগাড় করতে সমর্থ হয়। অক্সিজেন দেওয়ার পরেও রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৮৪ শতাংশের বেশি হচ্ছে না। বড়ভাই প্রতিদিন হাসপাতালে ধর্ণা দেয়। কিন্তু কোথাও শয্যা নেই। ছেলের এই খবর জেনে মা তীব্র মানসিক আঘাতে নির্বাক হয়ে গিয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসার সঙ্গে তাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এই খবরের পুরোটুকু জেনে বাংলাদেশে তাদের স্বজনদের মধ্যে আতঙ্কের হিমশীতল ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। একবছর আগে বাবা চলে গেলো। ক্যান্সারের কারণে মায়ের জীবন সংক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। তিনি এখন বাকহীন। করোনার ছোবলে ছোট ছেলেটির জীবন সংকটপূর্ণ। পুরো পরিস্থিতির চাপে বড় ছেলেটি উন্মাদপ্রায়। এমতাবস্থায় ভদ্রমহিলার ছোটবোন দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তার টেলিফোন নম্বর যোগাড় করতে সমর্থ হয়। ছোটবোন নিজেও ব্যাংকার। তিনি নিজ অন্তরের সমস্ত আকুতি মিশিয়ে হাইকমিশনের কর্মকর্তার সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।

অন্ধকার দৃশ্যপটে হঠাৎ যেন আলো জ্বলে উঠলো। একটি বেদনাবিধ্বস্ত বাংলাদেশি পরিবারের নৈরাশ্যের অন্ধকার দূর করতে যেন আলো হাতে এগিয়ে এলেন এক মানবিক দেবদূত এবং তার সহযোগীবৃন্দ। হাইকমিশনের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ছেলেটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো গেলো। দিল্লির হাসপাতালে বেডের মহাসংকট চলছে। আমাদের আলোচিত করোনা রোগীর স্থান হলো হাসপাতালের বারান্দায়। তারপর ক্রমশ বারান্দা থেকে কেবিনে ঠাঁই পেলো। পরিপূর্ণ চিকিৎসা পাওয়ায় সে এখন শঙ্কামুক্ত। তার মায়ের কথাবলার ক্ষমতা এখনো ফিরে আসেনি। তবে তার মধ্যে উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। পরিবারের দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতো হাইকমিশনের কর্মকর্তা ও তার সহযোগীবৃন্দ ছেলেটির দেখভাল করছে। এমনকি টেলিফোন করে ঢাকার স্বজনদের আপডেট জানাচ্ছে। দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের এই দায়িত্বশীলতায় আমরা অভিভূত। পদস্ত কর্মকর্তার নাম হচ্ছে জনাব সেলিম মো. জাহাঙ্গীর। তিনি হাইকমিশনের মিনিস্টার (কনস্যুলার উইং) পদে কর্মরত। তার সহযোগীদের অন্যতম হলেন জনাব শাব্বির। অন্যদের নাম আমরা জানতে পারিনি। তাদের জন্য আমাদের অভিনন্দন এবং ভালোবাসা। (সঙ্গতকারণে নামগুলো উল্লেখ করা হয়নি)।

লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়