রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমরা প্রতি বছর মে দিবস আনন্দের সঙ্গে পালন করি। মে দিবস হচ্ছে শ্রমিকের উৎসবের দিবস। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা এ দিবসটি পালন করে দুঃখের মধ্যদিয়ে। কারণ তাদের কর্ম পরিবেশের নিশ্চয়তা এখনো হয়নি। তাদের বেতন কাঠামো ঠিক নেই। সঠিক কর্মঘণ্টার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে সামগ্রিকভাবে যাতে ভালো জীবনযাপন করতে পারে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যায়, শ্রমিকদের একটা বিরাট অংশ কাজ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। যেখানে শ্রমিকদের বেতনের কোনো নিয়ম-কানুন নেই। শ্রমিকদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা অনেক বেশি। নারীদের সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে বৈষম্য আকাশচুম্বী। নারীদের জন্য যথাযথো কাজের পরিবেশ নেই। এরকম একটি সংকটের মধ্যে দিয়েই আমাদের দেশে মে দিবস পালন করা হয়। শ্রমিকদের মর্যাদা ও অধিকার নির্ভর করে কোনো ধরনের সরকার ক্ষমতায় আছে ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার পালা বদল হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের বদল হয়নি। তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা কেউ দেয় না।
সরকারগুলোর সঙ্গে সব সময়ই শ্রমিকদের বিপক্ষের লোক থাকে। শ্রামিকদের পক্ষের লোক সরকারে দেখা যায় না। মালিকপক্ষ সবসময় নিজেদের স্বার্থকেই প্রধান করে দেখে। শ্রম শোষণই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের সস্তা শ্রমকে তারা ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু শ্রমিকদের আরও বেশি মর্যাদা দিয়ে, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও কর্মপরিবেশ তৈরি করে আরও বেশি শ্রম নিয়ে কীভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায়, সে বিবেচনা তাদের থাকে না। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য মে দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়। মে দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য ৮ ঘণ্ট কাজ করার অধিকার ৮ ঘণ্টা সংগঠন করার অধিকার এবং ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের অধিকার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে প্রকৃত পক্ষে শ্রমিকদের কোনো সংগঠন নেই। তাদের নেই কোনো ট্রেড ইউনিয়ন। কোথাও কোথাও আছে মালিকদের দালাল ট্রেড ইউনিয়ন। বাংলাদেশে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার কোনো অধিকার নেই বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিকরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে তো একেবারেই শ্রমিকদের কোনো সংগঠন নেই। শ্রমিকদের কথা ভাবতে হলে প্রথমেই তাদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল ক্ষেত্রে কর্ম সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের অধিকাররের নিশ্চতা দিতে হলে জাতীয় বাজেটে যাতে শ্রমিকদের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে। যাতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশে শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করতে হবে। কারণ তারাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। অন্যদিকে রাষ্ট্রয়াত্ব খাতকে প্রধান খাত বলা হলেও সেগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। রাষ্ট্রয়াত্ব খাতকে দক্ষ ও দুর্নীতি মুক্তভাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে আমাদের সকল শ্রমিকের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া প্রয়োজন। দুঃখজনক হচ্ছে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকরা এক হয়ে তাদের আদর্শিক রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে এক হয়ে যদি কাজ করতে পারতো ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে পারতো তাহলেই তাদের অধিকার নিশ্চিত হতো। শ্রমিকদের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় না আসার কারণেই তাদের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না। শ্রমিকদের এই মে দিবসে শপথ নিতে হবে, যাতে তাদের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসতে পারে, যারা প্রকৃতপক্ষেই তাদের জন্য কাজ করবে। পরিচিতি : সম্পাদক, সিপিবি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহিন হাওলাদার