শিরোনাম
◈ পারস্পরিক শুল্ক সংকট: চূড়ান্ত দর-কষাকষিতে বাংলাদেশ ◈ আরব আমিরাতের আবুধাবিতে প্রবাসী বাংলাদেশির ভাগ্যবদল: লটারিতে জিতলেন ৮০ কোটি টাকা ◈ ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নিহত ১১৮, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনায় হামাস ◈ ‘মব এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবে সেনাবাহিনী’ ◈ হোটেলে নারীকে মারধর করা বহিষ্কৃত যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারের চেষ্টায় পুলিশ ◈ বনানীর জাকারিয়া হোটেলে ঢুকে নারীদের ওপর যুবদল নেতার হামলা, ভিডিও ◈ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ জামায়াতের নিবন্ধন পুনর্বহালের গেজেট প্রকাশ ◈ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদ দিবস পালনের নির্দেশ ◈ তিন দিনের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, পাবেন না যারা ◈ উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০১ সকাল
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২১, ০৫:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নূরী জাহানারা: ভারতের লড়াকু সাহসী মানুষের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

নূরী জাহানারা: ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। ক্ষমতা থাকলে অক্সিজেন বানিয়ে পাঠিয়ে দিতাম। দেশের জন্য কষ্ট হচ্ছে। ভারতের মানুষগুলোর জন্যও কষ্ট হচ্ছে। এক চিরস্থায়ী বন্ধনে ভারত বেঁধেছে বাংলাদেশিদের। আমরা সেরা প্রতিবেশী হয়ে, পরস্পরের জন্য মমতা ও আন্তরিকতা এবং শ্রদ্ধা নিয়ে পাশাপাশি উন্নয়নের পথে হাঁটতে পারতাম। তার মধ্যে ধর্ম কাঁটার মতো বিঁধতে শুরু করলো। তার মধ্যে নদীগুলোর স্রোতহীন অবয়ব, খরা বন্যার ইতিহাস রচিত হতে থাকলো। ভারতের লড়াকু সাহসী মানুষের জন্য শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বিদেশে যখন দেশের মানুষ পাই না, ভারতের কাউকে দেখলে মনে হয়- এই তো আমার চেনা মানুষ। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলার মানুষ ও প্রতিবেশী ভারতবাসী বিজয়ী হোক। দুবাই এয়ারপোর্টে একবার প্লেন থেকে নেমে ব্যাগ নিয়ে দৌড়াচ্ছি পেছন থেকে একজন ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কী ভারতীয়?

আমি তাকালাম। না আমি বাংলাদেশের। বাংলাদেশ, বলে তরুণ উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে এলো, আমি ...নাম বললো...আমি পাকিস্তান থেকে এসেছি। তারপর তরুণ অনেকক্ষণ উর্দুতে বললো, বাংলাদেশিদের তার আপনজন মনে হয়। আরও অনেক কথা। স্বতঃস্ফুর্ত তার আচরণ আমার ভালো লাগলো। জিজ্ঞেস করলাম- আপনি এখানকার স্টাফ? হ্যাঁ। ভালো- অমুক টার্মিনালে কোন্ পথে যাবো বলতে পারেন? নেক্সট বিল্ডিং। আই এ্যাম গোয়িং দেয়ার, ইউ ক্যান কাম উইথ মি। তারপর তরুণ কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বললেন, ইউ ডোন্ট স্পিক উর্দু। নো। আমার চাকরি জীবনের শুরুর দিকে পাকিস্তানের লেখক শিল্পীদের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তারা তাদের সৌজন্যমূলক আচরণের মাধ্যমে আমার অন্তরে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের জন্য একটা স্থান তৈরি করে দিয়েছিলেন।  ভাবছিলাম এই তরুণটি তাদেরই গোত্রীয়। কিন্তু আমাকে বিস্মিত করে দিলো তার পরের প্রশ্ন। আপনি হিন্দী বোঝেন? কিছুটা। বলতে পারেন। অল্প স্বল্প। আপনি হিন্দী বলেন, কিন্তু উর্দু বলেন না। কেন? আপনাকে কন্টেক্সট বুঝাবার মতো সময় আমার নেই।

কিন্তু ধরুণ আপনার বাড়ির কাছের প্রতিবেশী হিন্দীভাষী আর কখনও দেখা হয় না এমন এক লোক থাকে বারোশ কিলোমিটার দূরে। আপনি কার কথা ভালো বুঝবেন, যে আপনার বাড়ির কাছের, যার ভাষা আপনি প্রায়ই শোনেন তারটা, না দূরের লোকটার? উর্দু আমার বাড়ির কাছে হলে হয়তো ওটাও আমি কিছুটা বুঝতে পারতাম। ভাষার আপনার কানে, চোখে ও অন্তরে প্রবেশ করতে হবে। ভাষা শেখার মূল মোটিভেশন হলো- এর প্রায়োগিক প্রয়োজন থাকতে হয়। উর্দু আমি একটু আধটু বোঝার চেষ্টা করি, তবে তার কারণ ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ, গালিব, মীর, এবং পাকিস্তানের কবিগণ এবং সঙ্গীত শিল্পীগণ। তবে কখনো কখনো কিছু শব্দের জন্য গুগলের দ্বারস্থ হতে হয়। তরুণের দেখলাম আমার কথা শোনার উৎসাহ আর নেই। সে ভারী মনোক্ষুন্ন। সহায়তার জন্য ধন্যবাদ দিলাম তাকে আমি। সে চলে গেলো। মুহূর্তেই তার স্মৃতি থেকে আমি মুছে গেলাম। এই তরুণের ক্ষুব্ধ ক্ষুন্ন মুখ আমার প্রায়শই মনে পড়ে। আমাদের দু'জনের মাঝখানে ভারতের হিন্দী ভাষা এসে পড়ার সাথে সাথেই তার তাৎক্ষণিক ক্ল্যান বোধ উবে গিয়েছিল। আমি তার আগ্রহ হারালাম। অথচ কি চমৎকার এক তরুণ। সপ্রতিভ, কর্মঠ, দায়িত্বে বিবেচনাবোধ আছে। কিন্তু তার মাথাটা ভারত ও বাংলাদেশ বিষয়ে বিদ্যালয়ে সমাজে সাইজ করে দেওয়া হয়েছে। তারা কখনো সত্য ইতিহাসটি পড়ে না, জানে না। কি দুঃখজনক।

সুইডেনে দুই হাজার ঊনিশে পরিবেশ কর্মীদের মিছিলে গেছি, শাড়ি পরা দেখে মানুষ রীতিমতো ভারতীয় ভেবে তাকিয়ে দেখছে। কিন্তু আমার পরণে নেপালের প্রথাভিত্তিক নাচের একটি শাড়ি। একটু নেপালি দেখালে দোষ কি ছিলো? পাশে যারা দাঁড়িয়ে তারাও ধরেই নিলো, আমি ভারতীয়। একজন উঠে দাঁড়িয়েছেন। আমার একটি কবিতা পড়বেন তিনি। আমার পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি খেই হারিয়ে ফেলে বলে উঠলেন আমার বাড়ি ভারতে, তারপর সংশোধন করে বললেন পাকিস্তানে, আমি বলে উঠলাম, ইয়ু হ্যাভ কিল্ড মি, আই এ্যাম ডেড, আই ফিল আই হ্যাভ লস্ট মাই আইডেন্টিটি। তারপর আমি চেঁচিয়ে পুরো ভীড়কে জানালাম আমি বাংলাদেশি। ভদ্রলোক ভীষণ দুঃখিত হয়ে স্যরি বললেন। নেভার মাইন্ড, বলে ভীড় ঠেলে বেরিয়ে এলাম আমি। মনে হলো সারা জীবন বাংলাদেশের দোকানী ও পথচারীরা আমাকে প্রথম দেখায় দিদি বলে ডেকেছে। নাম না জানা তর্ক কেউ আমাকে আপা  বলে সম্বোধন করেনি। আমার মতো সর্বাস্তি পরিচয়- খাঁটি দক্ষিণ এশীয়, কয়জন আছে? যারা একই সাথে দেশীয় এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক? ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়