নিউজ ডেস্ক: বায়ুমণ্ডল থেকে বাতাস নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে তা পরিশোধন করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করার এক ধরনের যন্ত্রের নাম কনসেনট্রেটর। এক সময় শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগীদের বাড়িতে দেখা মিলত এ যন্ত্রের। আবার অনেক সৌখিন ব্যবহারকারীও তাদের বাড়িতে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রাখতেন। তবে করোনা মহামারী সে ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় অনেকেই ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এ যন্ত্র দুটি কিনে মজুদ করছেন। ফলে বাজার থেকে উধাও হয়েছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মেশিন। একই অবস্থা অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও।
চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমিত রোগীর যাদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়বে, তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। তাদের প্রয়োজন হবে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা। সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বা সিলিন্ডার ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করছেন তারা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, অতি আগ্রহীরা এসব সামগ্রী নিজ নিজ বাসায় মজুদ করার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে এগুলো আর পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার সংরক্ষণের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সে অনুযায়ী সংরক্ষণ করা না হলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জরুরি প্রয়োজনেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না কনসেনট্রেটর বা সিলিন্ডার। আবার চাহিদার কারণে দামও কয়েক গুণ বেড়েছে এ দুটি যন্ত্রের। সিলিন্ডার ও তার জন্য অক্সিজেন রিফিল পাওয়াও অনেক কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
অক্সিজেন কনসেনট্রেটর মূলত বায়ুমণ্ডল থেকে বাতাস নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে পরিশোধন করে বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহ করে। তবে করোনা সংক্রমিত রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিতে হলে অক্সিজেনের প্রবাহ ও বিশুদ্ধতার মাত্রা জানা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আতিকুল হক বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার বাসায় রেখে সে অর্থে কোনো লাভ নেই। কারণ জটিল করোনা রোগীর জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, তা বাসাবাড়িতে রাখা সিলিন্ডার দিয়ে মেটানো সম্ভব না। কনসেনট্রেটর কিছুটা কাজে লাগলেও জটিল রোগীদের হাসপাতালেই নিতে হবে। তাই এসব যন্ত্র কিনে মজুদ করা আসলে অপ্রয়োজনীয়। করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অক্সিজেন স্যাচুরেশন নিয়মিত পরিমাপ করা। স্যাচুরেশন ৯২-এর নিচে এলেই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশ মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপমেন্ট ডিলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা জেলার সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, একসময় শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগীদের জন্য অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সিলিন্ডার কেনা হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর অনেক সাধারণ মানুষও এ দুটি যন্ত্র কিনছেন। ফলে চাহিদা বেশি থাকায় দামও কিছুটা বেড়েছে। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় এমনিতেই এসব যন্ত্রের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কয়েক গুণ বেশি দামে এসব যন্ত্র বিক্রি করছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তবে তিনি নিজে কম লাভে এসব বিক্রি করছেন বলেও দাবি করেন।
দেশে মেডিকেল যন্ত্রাংশ বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজার মিটফোর্ড। এ বাজারে পাইকারি ও খুচরা দামে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়। এ বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এ এলাকার বাজার থেকে মাসে চার থেকে পাঁচটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ও সিলিন্ডার বা এ ধরনের যন্ত্র বিক্রি হতো। তবে করোনা আসার পরদিনই ১৫ থেকে ২০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর বিক্রি হয়। সিলিন্ডারের বিক্রিও বেড়েছে কয়েক গুণ। চাহিদা থাকায় দামও বেড়েছে কয়েক গুণ। আগে ছয় থেকে নয় লিটারের অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের দাম ছিল ১৫ থেকে ২৫ হাজার। এখন সেগুলোই বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। পাঁচ থেকে ছয় লিটারের অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের দাম ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, এখন দাম ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। চীন থেকে আমদানি করা সিলিন্ডারের দাম আগে ছিল সাড়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার, যা এখন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। খুচরা বাজারে এ দাম আরো বেশি।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কথা জানা যায়। এর ১০ দিন পর প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানায় সরকার। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৫ জন কভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১১ হাজার ৩০৫ জন। চলতি বছরের মার্চ থেকে বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। প্রায় সব দেশে প্রথমবারের চেয়ে এবারের তীব্রতা অনেক বেশি। - বণিক বার্তা