আমজাদ হোসেন :[২] গত কয়েক দিন সারা দেশে বিরাজ করছে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শুষ্ক মৌসুম। তারমধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সঙ্কট ও ফসলের ক্ষতি। তীব্র পানি সঙ্কটের মধ্যে বিশুদ্ধ বা গভীর নলকূপের পানি অন্যতম। বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, তোরাবগঞ্জ, চর লরেন্স, হাজিরহাট সহ সব কয়টি ইউনিয়নের প্রায় এলাকা। উপজেলার প্রায় এলাকার বসত বাড়ি পুকুর সহ জলাশয় ও খালের পানি শুকিয়ে গেছে।
[৩] কয়েকদিন যাবত তাপমাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে ধারণা করছে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য বিভাগ । বিশুদ্ধ পানি সঙ্কটের কারণে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া বা কলেরার মত মারাত্নক রোগ। শুধু বিশুদ্ধ পানি নয় ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৌসুমী ফসল।
[৪] সরেজমিনে দেখা যায়, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে হাসপাতালে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও মৌসুমী ফলন গাছে নেই বললে চলে। কৃষক পানির জন্য ফসল উৎপাদন করতে পারছে না।স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির চাহিদা দেখা দেয়। এতে গভীর নলকূপ ও চাপা নলকূপের পানি সঠিক ভাবে উত্তোলন হচ্ছে না। বিশুদ্ধ পানির লেয়ার পাচ্ছে না।
[৫] বিশুদ্ধ পানির হাহাকার দেখা দিয়েছে। গভীর নলকূপের পানি সঙ্কটের কারণে গ্রামের বসতবাড়িতে পুকুর বা জলাশয়, নদীর পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। পুকুর, জলাশয় বা খালের জমানো পানিতে নদীর পানির প্রভাহিত হয়।
[৬] যার ফলে ব্যবহারিত পানির মাধ্যমে জীবাণু গুলো মানব দেহে প্রবেশ করে। এবং বিভিন্ন ধরণের পানিবাহিত রোগ যেমন-ডায়রিয়া ও কলেরার সৃষ্টি হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে গত কয়েক দিন যাবত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ডায়রিয়া ও কলেরার রোগী প্রকোপ দেখা দেয়।
[৭] উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.আশিকুর রহমান বলেন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত খরা বা বৃষ্টি না হওয়ায় পানির লেয়ার অনেক গভীরে নিচে চলে যাচ্ছে। যার কারণে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। পানির স্তর ২২-২৩ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা অনুযায়ী গভীর নলকূল স্থাপন করা হচ্ছে।
[৮] উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবু তাহের বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রতিদিন প্রায় ৩ শত লোক ডায়রিয়া ও কলেরা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবং প্রতিদিন হাসপাতালে ৮০-৯৫ জন রোগি ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
[৯] উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা খরার কারণে মৌসুমী ও কৃষি ফসল উৎপাদনে দেরি হবে। বেশি সময় ধরে বৃষ্টি না হলে মৌসুমী ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। দীর্ঘদিন অতিরিক্ত খরা হলে মৌসুমী ফল যেমন- আম, কাঠাল, লিচু, পেয়ারার মুকুল ঝরে যাওয়া, অপরিপক্ক অবস্থায় ফল ছোট হয়। ফলনও কম উৎপাদন হয়।
[১০] উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাহ্ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট নিরশনে গভীর নলকূল স্থাপনের ব্যাবস্থা চলছে। এছাড়াও দীর্ঘ দিন খরার কারনে কৃষক ফসল উৎপাদনে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে কাজ চলছে।
[১১] উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, দীর্ঘ দিন বৃষ্টি হচ্ছে না। তাপমাত্রাও অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পানির তীব্র সঙ্কট ও মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট নিরশনে জনস্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে। এছাড়াও মৌসুমী ও কৃষি ফসল উৎপাদনে কৃষি অফিসকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।সম্পাদনা:অনন্যা আফরিন