নিউজ ডেস্ক: অবহেলা বা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে ‘গুরুতর আহত’ বা ‘প্রাণহানি’ ঘটালে বিদ্যমান সড়ক আইনে তা ১৮৬০ সালের পেনাল কোড অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। তবে সড়ক আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে দুর্ঘটনায় কেবল কারো ‘প্রাণহানি’ ঘটলেই তা পেনাল কোডের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। শাস্তি সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের বিধান পাঁচ বছর রাখা হলেও সর্বোচ্চ জরিমানা প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ লাখ টাকা।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ পাস করে সরকার। আইনটি কার্যকর হয় এর প্রায় ১৪ মাস পর, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে। শুরু থেকেই আইনটির বিভিন্ন ধারা বাতিল ও সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ সংশোধনের জন্য প্রস্তাবিত খসড়ায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবিগুলোরই প্রতিফলন ঘটেছে।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অন্যতম দাবি ছিল, সংঘটিত সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা। বিদ্যমান আইনে মোটরযানের কারিগরি নির্দেশ অমান্য (ধারা ৮৪), ওভারলোডিং ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে মোটরযান চালানোর ফলে দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন (ধারা ৯৮) এবং দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত অপরাধ (ধারা ১০৫) জামিন অযোগ্য। খসড়া সংশোধনী প্রস্তাবে কেবল দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত অপরাধকে জামিন অযোগ্য করার কথা বলা হয়েছে।
পরিবেশ দূষণকারী, ঝুঁকিপূর্ণ ইত্যাদি মোটরযান চালানোর জন্য বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। সংশোধনী প্রস্তাবে এসব অপরাধের শাস্তি কমিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি জোরে হর্ন বাজালে বিদ্যমান আইনে শাস্তি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। এ অপরাধে শাস্তি কমিয়ে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
ট্রাফিক সাইন ও সংকেত অমান্যের জন্য বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ শাস্তি কমিয়ে কেবল ১ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন না করা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অপরাধে বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এ অপরাধে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
কোনো চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল, প্রত্যাহার বা স্থগিত হওয়ার পরও তিনি গাড়ি চালালে বিদ্যমান আইনে শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ অপরাধে অর্থদণ্ডের পরিমাণ কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
কেউ ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি করলে শাস্তি হিসেবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইনে। সংশোধনীতে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান চালালে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে বিদ্যমান আইনে। তবে সংশোধনীতে জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ১২৬টি ধারার মধ্যে ৩০টি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সংশোধনীগুলোর খসড়া প্রস্তুত করে সেগুলোর ওপর মতামত দেয়ার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডার এবং জনমত যাচাইয়ের জন্য খসড়াটি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। - বণিক বার্তা