শাহীন খন্দকার: [২] লকডাউনে ঢিলেঢালাভাবই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে চলছে সর্বাত্মক লকডাউন। তবু নানা অজুহাতে কিংবা মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হচ্ছে মানুষ। বিশেষজ্ঞদের অভিমত , যতই দিন যাচ্ছে করোনায় মৃত্যু হার বেড়েই চলেছে শুক্রবার ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে করোনায় এপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ১৮২ জন। দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা আজ শনাক্ত ৪ হাজার ৪১৭ জন।
[৩] প্রথম দিনের তুলনায় তৃতীয় দিন যেন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে যান চলাচল। আবার সকালের চেয়ে বিকেল হলে বাড়ছে আনাগোনা। অথচ ঠিক এক বছর আগে এর চেয়ে কম সংক্রমণ মাথায় নিয়েও কড়া লকডাউন দেখেছে দেশ। রাস্তায় বের হওয়াদের মন্তব্য, এ বছর মানুষ লকডাউন মানতে রাজি নয়। কলকারখানা খোলা রাখলে কেউই লকডাউন মানবে না। গতবার সেনাবাহিনী ছিল। তারা অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছে।
[৪] জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সেই লকডাউনে বাংলাদেশের সংক্রমণের হার প্রায় ৭৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তবে প্রথম তৃতীয়’দিনের এই চিত্র দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও কাঙ্ক্ষিত সুফল পেতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে আরো কঠোরভাবে। অধ্যাপক ডা. আজমীর হোসেন বলেন, লকডাউন বললেই মানুষ বাসায় থাকবে না। মানুষকে কিছুটা হলেও জোর দিতে হবে। নাহলে লাভ নেই। প্রয়োজনে লকডাউন সময় আরো বাড়ানোর পরামর্শ তাদের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে প্রকাশ এপর্যন্ত শনাক্ত ৭ লাখ ১১ হাজার ৭৭৯ এবং সুস্থ্য হয়েছে ৬ লাখ ২ হাজার ৯০৮ জন।
[৫] এদিকে রাজধানীর সরকারি হাসপাতাল গুলোতে মোট আইসিইউ বেড ১৬২টি , আইসিইউ সমতুল্য হাইফ্লো নেজাল ক্যানোলা সংযুক্ত বেড ৩৮৯ টি আর অক্সিজেন কন্সেণ্ট্রেটর বেড রয়েছে ১৪৪টি আইসিইউ সমতুল্য বেড ৫৫১টি আর খালি আছে আইসিইউ সমতুলবেড ২১১টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাত দিনের লকডাউনে কাজ হবে না। বরং করোনার পরীক্ষা বাড়ানো দরকার। তারা বলছেন, উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তরা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য বিপদজনক। পরীক্ষা কেন্দ্রে অনেকে আসতে রাজি হচ্ছেন না। পরীক্ষা করাতে গিয়ে ঘণ্টার পর
[৬] ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই লোকজনকে আগ্রহী করতে নমুনা পরীক্ষা ফ্রি করার সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি জানিয়েছে, সংক্রমণের হার বাড়ার কারণে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোতে রোগীর ভিড় কিছুটা বেড়েছে। এদের একটা বড় অংশ বিদেশগামী যাত্রী। তাদের ছাড়া বাকিদের বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারলে সরকারি ল্যাবরেটরিতে চাপ কিছুটা কমবে।
[৭] এদিকে নমুনা পরীক্ষা কম থাকার কারণ হিসেবে লকডাউন ও সরকারি ছুটিকেই কারণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। দেশে এখন ২৫৭টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ১২১টি পরীক্ষাগারে, জিন এক্সপার্ট মেশিনের মাধ্যমে হচ্ছে ৩৪টি এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে পরীক্ষা হচ্ছে ১০২টি পরীক্ষাগারে।
[৮] রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। এখন আমাদের সক্ষমতা রয়েছে। অ্যান্টিজেন টেস্ট করে আধঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দেওয়া যায়। কেউ নেগেটিভ হলে তাকে আরটি-পিসিআর টেস্ট দেওয়া হয়।
[৯] ২৪ ঘণ্টায় (১৫-১৬ এপ্রিল) নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৭৭০টি, পরীক্ষা করা হয়েছে ১৯ হাজার ৯৫৯টি। দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে অ্যান্টিজেনসহ ৫১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭২টি। এই সময়ে শনাক্তের হার ছিল ২১ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।