অনলাইন ডেস্ক : লবণের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষি। মণপ্রতি লবণের উত্পাদন খরচ ২০০ টাকা আর বিক্রি ১৬৮ টাকার বেশি না। এতে লবণ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। ফলে এবার ২০ থেতে ৩০ শতাংশ জমি চাষের বাইরে রয়েছে। চাষিদের অভিযোগ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় লবণ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দেশে উত্পাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে প্রান্তিক চাষিরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাদের বেঁধে দেওয়া দরের মধ্যেই লবণ বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে অনেক চাষি বিক্রি না করে মাটির নিচে মজুত রেখে দিচ্ছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার লবণ উত্পাদন ভালো হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা ও বাঁশখালী উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। বিসিক সূত্র জানায়, গত বছর ৫৭ হাজার ২২ একর জমিতে লবণের চাষ হয়। গত কয়েক বছর যাবত বাজারে অব্যাহত মন্দার কারণে লবণ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষি। ফলে এবছর ৫৪ হাজার ৬০০ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। লবণ চাষের সঙ্গে প্রায় ২৭ হাজার চাষি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কিন্তু লবণের উত্পাদন খরচ পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষিরা। বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রতি মণ লবণ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। অথচ এক একর জমিতে সব মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা উত্পাদন খরচ পড়ে।
লবণচাষিদের সংগঠনগুলোর অভিযোগ তারা কোনো ব্যাংক ঋণ পান না। ঋণ নিয়ে লবণ চাষ শুরু করেন। তাদের মূলধন সংকটে অসহায়ত্বের সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগী। তারা মৌসুমের শুরুতে চাষিদের শর্তসাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে। উত্পাদিত লবণ তাদের কাছে বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি করতে হয়। এভাবে অগ্রিম ঋণ নিয়ে চাষিরা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। দাম বাড়লেও তারা বাইরে বিক্রি করতে পারেন না।
বাংলাদেশ লবণচাষি কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস বলেন, এবার প্রায় ৩-৪ হাজার একর জমি লবণ চাষের বাইরে রয়েছে। চাষিরা প্রতি মণ লবণের দাম ১৫০/১৬০ টাকার বেশি পাচ্ছে না। ফলে লবণ আবাদ কমে গেছে। দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করছে। তারা খোলা বাজারে কম দামে ভোজ্য লবণ হিসেবে বিক্রি করছে। ফলে প্রতিযোগিতার বাজারে দেশীয় লবণ টিকতে পারে না। বাংলাদেশ লবণচাষি বাঁচাও পরিষদের আহ্বায়ক সাজেদুল করিম বলেন, বাজারদর কম হওয়ায় লবণ বেচাকেনা হচ্ছে না। প্রতি একরে ২ লাখ টাকা উত্পাদন খরচ পড়ছে। উত্পাদিত লবণ বিক্রি করে দেড় লাখ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রান্তিক পর্যায়ে প্রতি মণ লবণ ১৬০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না।
বিসিক কক্সবাজার কার্যালয় জানায়, এবার ২২ লাখ টন লবণ উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের উত্পাদিত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টন লবণ চাষিদের কাছে অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। তাই মজুত লবণ বাদ দিয়ে ১৮ লাখ টন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১১ লাখ টন লবণ উত্পাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে সামনের সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে। ইত্তেফাক